চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি সেবা আর কবে

ইন্টারনেট দুনিয়া September 20, 2016 1,333
চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি সেবা আর কবে

দেশে টেলিযোগাযোগ সেবায় চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি বা ফোরজি চালুর স্বপ্ন পূরণ বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে থ্রিজি প্রযুক্তি আসার পর ২০১৫ সালের মধ্যেই ফোরজি প্রযুক্তি চালুর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখনও তা চালু হয়নি। বরং এ ব্যাপারে জটিলতা আরও বেড়েছে। বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন সভায় থ্রিজির জন্য ব্যবহৃত বেতার তরঙ্গ ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ফোরজি সেবা দেওয়ার জন্য নতুন করে লাইসেন্স নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর ফোরজি চালু নিয়ে জটিলতা আরও বাড়ছে বলেই মনে করছেন মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের প্রধান নির্বাহী ও মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবীর। কারণ, ২০১৩ সালে থ্রিজির জন্য বেতার তরঙ্গ নিলামের সময় প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার নীতি অনুযায়ী এ ব্যান্ডে ফোরজি সেবা দেওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।


গত ৩০ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন সভার সিদ্ধান্তের ফলে পূর্ব ঘোষণা থেকে বিটিআরসি সরে এসেছে বলে মন্তব্য টি আই এম নুরুল কবীরের। অবশ্য বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন, ফোরজি চালু নিয়ে যাতে সমন্বয়হীনতা না হয়, সে জন্যই ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বিটিআরসি ফোরজি সেবার জন্য ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের বেতার তরঙ্গকে নির্বাচন করেছে। এ বেতার তরঙ্গের নিলামের আগে ফোরজি সেবা চালু নিয়ে যেন সমন্বয়হীনতা না হয় সেজন্যই নতুন করে লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিটিআরসি। রবি এবং এয়ারটেলের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ হলেই ফোরজির জন্য ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে নিলাম হবে বলে তিনি জানান।


বাংলাদেশে ফোরজি চালুর জন্য চারটি ব্যান্ডের বেতার তরঙ্গকে ব্যবহারযোগ্য মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে বর্তমানে থ্রিজি এবং ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে টুজি সেবা দিচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। ২৬০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড ব্যবহার করছে ওয়াইম্যাক্স অপারেটররা। ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড এখনও অব্যবহৃত।


একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আরও দু’বছর আগেই বাংলাদেশে ফোরজি চালু করা সম্ভব ছিল। বিটিআরসির রক্ষণশীল নীতির কারণে সে সম্ভাবনা পিছিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফোরজি সেবা চালু রয়েছে। এ ব্যান্ডে ফোরজি এলটিই প্রযুক্তি সংবলিত হ্যান্ডসেট, নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতিসহ সবকিছুই সহজলভ্য রয়েছে। তিনি বলেন, ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে নতুন করে ফি দিয়ে ফোরজি চালুর অনুমতি দিলেও একাধিক অপারেটর তা দিয়েই ফোরজি চালু করবে। তিনি আরও বলেন, ৭০০ মেগাহার্টজে ফোরজি চালু অপারেটরদের জন্য অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ হবে। কারণ এ ব্যান্ডে নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতির দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। তার চেয়েও বড় কথা, ৭০০ মেগাহার্টজে ফোরজি ব্যবহারের জন্য কম খরচে স্মার্টফোনও মিলবে না বাজারে। বর্তমান বাজারে ১০ হাজার টাকার মধ্যেই ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের জন্য ব্যবহার উপযোগী ফোরজি এলটিই হ্যান্ডসেট পাওয়া যায়; কিন্তু ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের জন্য উপযোগী ফোরজি এলটিই হ্যান্ডসেট কিনতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পড়বে।


অ্যামটবের মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবীর বলেন, ১৮০০ মেগাহার্টজে সবচেয়ে সহজে, কম খরচে এবং কম সময়ের ফোরজি সেবা চালু করা সম্ভব। এখন ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ফোরজি চালুর জন্য নতুন করে লাইসেন্স নিতে আগ্রহী হবে না মোবাইল ফোন অপারেটররা।


ফোরজি চালুর জন্য নির্দিষ্ট ব্যান্ডের বেতার তরঙ্গ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে বিটিআরসিতেও মতপার্থক্য রয়েছে। সর্বশেষ কমিশন সভায় ফোরজি চালু সম্পর্কিত বিবরণীতে দেখা যায়, চলতি বছরের ১১ জুলাই বিটিআরসির স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে কমিশন সভায় উপস্থাপনের জন্য যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়, সেখানে বলা হয়, ‘প্রতীয়মান হয় যে, ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে থ্রিজি সেবার জন্য বরাদ্দকৃত ব্লক ব্যবহার করেই মোবাইল ফোন অপারেটররা ফোরজি সেবা দিতে পারবে। থ্রিজি লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুযায়ী ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ফোরজি এলটিই সেবা দেওয়ার জন্য পৃথক কোনো লাইসেন্স গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নেই মর্মে এ বিভাগ মত পোষণ করে। তবে ৮০০, ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ফোরজি সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেহেতু সরকার কর্তৃক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেহেতু এসব ব্যান্ডে ফোরজি সেবার জন্য সরকার যৌক্তিক মনে করলে অপারেটিং লাইসেন্স গ্রহণের শর্ত প্রণয়ন করতে পারে বলে এ বিভাগ মনে করে।’


একই বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগ থেকে থ্রিজি লাইসেন্স গাইডলাইনের ১৪ দশমিক ১ এবং ১৪ দশমিক ৩ ধারার ব্যাখ্যাসহ বলা হয়, ‘থ্রিজি সেবার জন্য বরাদ্দকৃত ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে মোবাইল অপারেটররা ফোরজি সেবা দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং রেগুলেশন অনুযায়ী ফোরজি সেবার জন্য লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ থাকলেও লাইসেন্স গ্রহণ করা মোবাইল ফোন অপারেটরদের ফোরজি সেবা দেওয়ার সুযোগ নেই মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে।’


দুটি বিভাগের দুই ধরনের মতামত পর্যালোচনার পর ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে লাইসেন্স গ্রহণের শর্ত আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন সভা।


এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ফোরজি সেবা চালুর জন্য বিটিআরসি আন্তরিক। এ ক্ষেত্রে বেতার তরঙ্গের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাও বিটিআরসির দায়িত্ব। এ কারণে সবদিক পর্যালোচনা করেই ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ফোরজি চালুর জন্য লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। তিনি আশা করেন, যতটা সম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফোরজি সেবা চালু সম্ভব হবে। - ঝুম বাংলা