No Smoking (বলিউডের অন্যতম সেরা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভি )

মুভি রিভিউ September 18, 2016 4,467
No Smoking (বলিউডের অন্যতম সেরা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভি )

“Life is very, very complicated and so films should be allowed to be too.” – David Lynch

রিভিউ : No Smoking

ডিরেক্টর : অনুরাগ কাশ্যপ

অভিনয়ে : জন আব্রাহাম ,পরেশ রাওয়াল ,আয়েশা টাকিয়া etc.

জনরা : Mystery /Neo-noir / মাথা নষ্ট

____________________________________________________

No smoking মুভিটি “কে” নামের চেইন স্মোকার কে নিয়ে। এই স্মোকিং এর জন্য সে তার পরিবারের সবার কাছে অপ্রিয়। এক সময় তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দেয়ার কথা বলে। নিরুপায় হয়ে কে একটি নিরাময় কেন্দ্রে যায়। তারপরই শুরু হয় অদ্ভুত সব ঘটনা। আস্তে আস্তে কে হারিয়ে যায় বাস্তব আর কল্পনার এক জগতে। এখন আসলে কোন জগৎটি আসল, কোন জগৎ টি কল্পনা আর মুভির অনেক গুলো bizarre ঘটনা গুলোর আসল মিনিং কি তা জানতে হলে দেখতে হবে এই অসাধারণ সাইকোলোজিক্যাল থ্রিলার মুভিটি।

____________________________________________________


Personal Rating : 9.5/10(No smoking stephen king এর ছোট গল্প quitters,ink থেকে অনুপ্রাণিত। গল্প বলার স্টাইল অনেকটা David lynch এর মুভিগুলোর মতো। মূল ক্যারেক্টার এ জন আব্রাহাম দারুন অভিনয় করেছে। আর পরেশ রাওয়াল যে কত বড় অভিনেতা তা তার ছোট ক্যারেক্টার থেকে বোঝা যায়। আয়েশা টাকিয়া আর রণবীর শোরে ও সাপোর্টিং ক্যারেকটার হিসেবে ভালো ছিল।তবে মুভির নায়ক হলো অনুরাগ কাশ্যপ। স্টিফেন কিং আর ডেভিড লিঞ্চকে ভারতীয় কন্সেপ্টে মিক্স করে এই রকম অসাধারণ মুভি একমাত্র কাশ্যপ এর পক্ষেই সম্ভব। যাদের ডেভিড লিঞ্চ এর surreal মুভিগুলো দেখতে পছন্দ তাদের জন্য এটি একটি মাস্ট সি মুভি। )


______________Movie Explanation(spoiler alert)________________


প্রথমেই বলে দেই,এই মুভি দেখে সাধারণত দুই ধরণের রিঅ্যাকশন এর যে কোন একটি হবে। প্রথমটি হলো কি অসাধারণ একটি মুভি দেখলাম আরেকটি হলো কি মুভি দেখলাম মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। যাদের দ্বিতীয় টাইপের রিঅ্যাকশন তাদের জন্যই এই এক্সপ্লেইনেশন।


মেইন প্লট এক্সপ্লেইন করার আগে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্পর্কে একটু বলে নেই। আমাদের সমাজে অনেকেই অনেক কিছু হতে চায়। কিন্তু সমাজ আর পরিবারের চাপে সে আর স্বপ্ন পূরণ করতে পারে না। জীবনটা নিয়মের বেড়াজালে পড়ে মানুষ এক যন্ত্র হয়ে যায় যার নিজের আত্মার ইচ্ছের কোন মূল্যই নেই। এই রকম একটি কন্সেপ্টকেই মেটাফোরের মাধ্যমে দেখিয়েছে কাশ্যপ।


এখন মুভির টাইমলাইনটা একটু লক্ষ্য করা যাক। কে একজন ডোন্ট কেয়ার টাইপের মানুষ। তার এই ধূমপানের জন্য অনেকের কাছে অপছন্দের। তার ভাই এর একটি lung নষ্ট। এদিকে তার স্ত্রী তাকে এক ধূমপান নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং ডাক্তার তার কাছ থেকে এক টাকা দাবি করে কিন্তু তার কাছে তখন টাকা থাকে না। এর পরেই সে একটি বিশাল স্বপ্ন দেখে আর আমাদের মুভি এখান থেকেই শুরু।


মুভির কয়েকটি কনফিউসিং প্লটের এক্সপ্লেনেশন –


সাইবেরিয়া – সাইবেরিয়া মূলত একনায়কতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত। এখানে কে বন্দিদশা থেকে মুক্তি চায় আর বাইরে গিয়ে দুইটি জিনিস পায়, সিগারেট এর প্যাকেট আর বাথটাব। এখানে সিগারেট এর প্যাকেট দ্বারা তার আত্মার ইচ্ছা আর বাথটাব দিয়ে সমাজের ইচ্ছা বোঝানো হয়েছে। যখনই সে সিগারেট এর প্যাকেট বেছে নেয় তখনই তার সমাজ তাকে মেরে ফেলে।


ওয়াইফ আর সেক্রেটারি – কে এর সেক্রেটারি তার subconscious মাইন্ড দ্বারা সৃষ্টি। সে আসলে যেভাবে তার সেক্রেটারিকে চায় সেভাবেই সপ্নে সে দেখে।


ভাই এর সুইসাইড – কে মনে করে যে তার ভাই এর অসুসস্থতার জন্য সে দায়ী। তাই সে স্বপ্নে তার ভাইকে মেরে ফেলার জন্য নিজেকে দায়ী করে।


কাটা আঙ্গুল – কে বুঝতে পারে যে তার বাজে স্বভাবের কারণে সবার ক্ষতি হচ্ছে। তাই তার আত্মার ইচ্ছা মানে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেয়। আর যে দুটি আঙ্গুল কাটা সেই আঙ্গুল দিয়েই সে সিগারেট খেত।আর কেউ যখন সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেয় কিন্তু বাকিদের সিগারেট খাওয়া দেখে তখন মনে হয় কি যেন মিসিং। তাই যখন সে তার বন্ধুদের ও সিগারেট খাওয়া (আত্মার ইচ্ছা নষ্ট করা)ছাড়াতে পারে তখন মনে হয় সে তার কাটা আঙ্গুল ফিরে পেয়েছে ।


প্রিজন সিন – মুভির রিয়েল টাইমের একসময় কে দেখতে পায় তার স্ত্রী Schindler’s List দেখছে। সেই মুভির প্রিজন সিন তার মাথায় গেথে যায়। পরে সে স্বপ্নে কল্পনা করে প্রিজন এমন এক জায়গা যেখানে তাদের সবার আত্মার ইচ্ছেকে বন্দি করে রাখা হয়।


বাথটাব – আগেই বলেছি যে বাথটাব সমাজের প্রতিচ্ছবি। যখন সে সাইবেরিয়া তে বাথটাব বেছে নেয় তখন সে আসলে সে তার আত্মার ইচ্ছাকে মেরে ফেলে। তার ফলেই আত্মা প্রিজন এ যায় আর পরবর্তীতে পুড়ে যায়। তার পরেই সে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার দুই আঙ্গুল কাটা মানে সে তার আত্মার ইচ্ছা তথা স্মোকিং ছেড়ে দিয়েছে।

বাবা বাঙালি – বাবা বাঙালি আসলে একজন ডাক্তার যাকে কে স্বপ্নে বাবার রূপ দেয় ,এই চরিত্র দ্বারা কাশ্যপ আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে বুঝিয়েছে যা সবসময় আমাদের নিয়মের ভিতরে চলতে সাহায্য করে।


এক টাকার কয়েন – আমরা অনেক সময়ই জীবনে ছোট ভুল করি যার জন্য পরে পস্তাতে হয়। এখানে রিয়েল লাইফ এ সে ডাক্তার কে এক টাকার কয়েন দেয়নি যার জন্য স্বপ্নে সে তার ফল ভোগ করা দেখেছে ।


আমার মনে হয় এতগুলো পয়েন্ট পড়ার পরে সবারই মুভির কন্সেপ্ট সম্পর্কে ধারণা হয়ে যাবে।আসলে যে সময়ে কাশ্যপ এই মুভি বানিয়েছে সে সময় ইন্ডিয়ান দর্শক এই রকম মুভি সম্পর্কে রেডি ছিল না (এখনো পুরোপুরি হয়নি ) .যত তাড়াতাড়ি এই উপমহাদেশের মানুষ এই কনসেপ্টের মুভি বুঝতে শুরু করবে ততই তারা অন্তত গল্প বলার ক্ষেত্রে হলিউডের মানের হতে পারবে।