রক্ত (২০১৬) – আলোচনা ও বিশ্লেষণ

মুভি রিভিউ September 18, 2016 3,349
রক্ত (২০১৬) – আলোচনা ও বিশ্লেষণ

রক্ত, ফাইট ফর ব্লাড ট্যাগলাইন নিয়ে নির্মিত পরীমনি অভিনীত সব থেকে আলোচিত সিনেমা। বিগ বাজেট, অ্যাকশন, বিতর্ক সব কিছু নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার সব উপকরণ নিয়ে প্রস্তুত ছিল জাজ মাল্টিমিডিয়ার এবারের ঈদের ধামাকা “রক্ত – ফাইট ফর ব্ল্যাড”।


মূলত লেডি অ্যাকশন ধর্মী সিনেমা হবার জন্য শুরু থেকেই মাহিয়া মাহির আগ্নির সাথে তুলনা শুরু হয় রক্তের প্রধান চরিত্র পরীমনিকে নিয়ে। জাজ অগ্নি কন্যা তানিশার পর এবার পরিচয় করে দেয় রক্ত কন্যা সানিয়াকে। তাহলে স্বভাবতই তুলনা চলে আসবে এই দুয়ের মাঝে। সেদিকে না হয় পরে দৃষ্টিপাত করা যাবে। সবার আগে জেনে নেয়া যাক, কেমন ছিল রক্ত সিনেমা।


কাহিনী সংক্ষেপ


৪ বছর আগে স্মৃতি ভুলে যাওয়া নূরীর হঠাৎ হঠাৎ স্মৃতি ফিরে আসে। স্বপ্নে দেখতে পায় কেউ তাকে আর তার মেয়েকে তাড়া করছে। মাথায় গুলি লেগে নূরী নদীতে পড়ে যায়। এতটুকুই সে মনে করতে পারে, বাঁকিটা আর মনে আসে না তার। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে ফ্রিল্যান্সিং সাংবাদিক রোশান। পালিয়ে যাবার সময় দেখা হয় নূরীর সাথে, এক পলকেই প্রেমে পড়ে যায় সে। কিন্তু হায় !! বিধি বাধ সাথে। নূরীতো বিবাহিত কি হবে এবার??? বলতে পারবে কি সে তার মনের কথা। এরমধ্যেই সে দূর্ঘটনা থেকে বাঁচায় নূরীকে। হঠাৎ করে নূরী জানতে পারে তার নাম নূরী না, তার আসল নাম সানিয়া। তাকে মারার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে কেউ, কিন্তু সে কে? এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য রোশান কে সাথে নিয়ে বের হয়ে পড়ে নিজের আপন ঠিকানা খুঁজে পাবার জন্য । তারপর ————–




সিনেমা সংক্রান্ত পর্যালোচনা


সিনেমার কাহিনী বিন্যাস, চিত্রগ্রহন, গান ছিল বেশ ভালো। লোকেশন, সেট বেশ জাকজমক ছিলো। গানের প্রতিস্থাপন ভালোভাবে করা হয়েছে। সাধারণত এতোগুলো গান স্থান করার জন্য সিনেমার দৈর্ঘ্য খুব বেশি বড় হয়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বেশ ভালো ভাবেই সেটা মানিয়ে নেওয়া হয়েছে।


অভিনয়ের দিক থেকে বলব নবাগত রোশান আসলেই একটা চমক এবারের ঈদে। প্রথম সিনেমা হিসাবে এতোটা ফ্লুয়েন্ট খুব কম অভিনেতা হয়ে থাকে। দারুণ এক্সপ্রেশন ও ডায়লগ ডেলিভারী করে ছেলেটা। সাথে আছে সুদর্শন লুক আর মানাসই উচ্চতা ও দেহের গড়ন। অ্যাকশন দৃশ্যতে আসলেই খুব ভালো করেছে । সব দিক থেকে রক্ত সিনেমাতে বলার মত কিছু থাকলে সেটা হচ্ছে রোশানের অভিনয়। নতুন হিসাবে তিনি পুরোপুরি সফল সেদিকে বলতেই পারি।


এবার আসি রক্তকন্য পরীমনির দিকে। এক কথায় বলি নাচে বা গানে তার তেমন ভালো এক্সপ্রেশন হয় না। আর সব থেকে বড় কথা অ্যাকশন লুকে তাকে মানায় না। তিনি আসলে রোমান্স কুইন হলেই ভালো হবেন। রোশানের সাথে রাস্তায় শুয়ে চাঁদের আলোতে রোম্যান্টিক কথা বলার সময় আর আবেগ দেখা গিয়েছে। এছাড়া কান্নার সময় মনে হয় জোড় করে কাঁদছেন। যদিও তিনি অ্যাকশনের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন, পানিতে বেশ কয়েকবার ভিজেছেন। তারপর ও কিছু কথা থেকে যায়।


কাহিনী বিন্যাস ভালো হলেও প্রথম অর্ধে যেভাবে এগিয়েছে, দ্বিতীয় অর্ধে এসে সেই ধারা অব্যহত রাখতে পারে নি। বেশ তালগোল পাকিয়ে সিনেমা শেষ করেছে বলা যায়।


যৌথ প্রযোজনার সিনেমার সব থেকে বড় সমস্য হল বাংলাদেশের ও হয় না ভারতের ও হয় না। সিনেমাতে খালি দেশ দেশ করেই গেলো কিন্তু কোন দেশ বুঝলাম না। সিনেমার শ্যূটিং চলে ভারতে আর সেখানে যায় বাংলাদেশ পুলিশ। কিভাবে? সিনেমার ব্যকগ্রাউন্ডে থাকে হিন্দি সিনেমার পোষ্টার কিন্তু বলে বাংলাদেশের একটা লোকেশনের কথা। এই আমি বাংলাদেশের কিন্তু পরের দৃশ্য ভারতে। আজব ব্যপার !! এছাড়া গানের লিপ্সিং এর সমস্যা, প্রথম দিকে অমিত হাসানের অতিরিক্ত অভিনয় এসব বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে। এডিটিং এর সময় বেশ খেয়াল করা উচিত। পানির নিচের দৃশ্যে ক্যামেরা ম্যানের হাত দেখা যাচ্ছে বেশ বড় করে, এগুলো ছোট ভুল হলেও বানিজ্যিক সিনেমার জন্য এগুলো বিশাল ত্রুটি। এছাড়া হুট করে সাধু ভাষার ব্যবহার সিনেমার মাঝে শ্রুতিকটু লেগেছে।


বাংলা চলচ্চিত্রে মনে হয় এই প্রথম ডিজিটাল সিনেমাতে অন স্ক্রিন কিস সীন দেখানো হয়েছে। আমি আসলে এটা নিয়ে তেমন কোন মন্তব্য করতে চাই না, তবে ফ্যামিলি নিয়ে এই দৃশ্য দেখার মত কালচার আমাদের দেশে হয়ে উঠেনি।


সিনেমা হিসাবে রক্ত বেশ উপভোগ্য, আপনি হয়তো বোরিং হবেন না। তবে নির্মান ও অভিনয় ত্রুটির জন্য সিনেমাটি অনেকাংশে পানশে হয়ে যাবে। আর আমি একটি কথা সব সময় বলি, রিমেক করলে আপনারা স্বত্ব কিনে সিনেমা নির্মান করেন। এভাবে বাইরের দেশের সিনেমা থেকে সীন টু সীন কাহিনী নিয়ে শেষে নিজের মত করে উপসংহার টানলে সিনেমার দ্বিতীয় অর্ধের কাহিনীতে তালগোল পাকিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। রক্ত ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমেরিকান অ্যাকশন থ্রিলার “The Long Kiss Goodnight” এর কাহিনী হুবুহু মেরে দিয়েছে। সব দিক থেকে রক্ত নিয়ে যতটা আশা করেছিলাম তা পূরণ হয় নি, তবে রোশানের মত একজন তারকা উপহার দিয়েছে রক্ত। রক্ত কখনো একক নারী ভিত্তিক সিনেমা নয়, রক্ত বলতে গেলে রোশানের সিনেমা কারণ সিনেমাতে দুজনের অংশ একেবারে সমান সমান, হয়তো কোথাও রোশনে একটু বেশি। দেখার বিষয় এই নতুন ফুলকে আমারা আমাদের বাগানে কতদিন ধরে রাখতে পারি।


সর্বোপরি রক্ত বোরিং সিনেমা নয় তবে নির্মানে ত্রুটি পরিলক্ষিত। সব দিক বিবেচনায় আমার রেটিং ৬.৫/১০ ।