বসগিরি (২০১৬) – আধারের ঘনঘটা !!!!!

মুভি রিভিউ September 18, 2016 3,308
বসগিরি (২০১৬) – আধারের ঘনঘটা !!!!!

গেলাম, দেখলাম, উঠে এলাম !!! মাঝ দিয়ে কিছু সময় চলে গেলো। কথায় আছে সময় এবং নদীর স্রোত কোনদিন কারো জন্য অপেক্ষা করে থাকে না। শুধু স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়। আমার স্মৃতির মণিকোঠায় বসগিরি ও আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে আজীবন। কি পেলাম বা কি পেলাম না মাঝে মাঝে সে হিসাব যেন খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পরে। যখন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র একটু একটু করে আলোর মুখ দেখে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তখন উন্নতির কোন লক্ষন না চোখে পড়লে, সেখানে স্থির হয়ে থাকবার আশংকা মনে দানা বাধবে এটাই স্বাভাবিক।


আমি কেউ না, কিছু না। সিনেমা নিয়ে বলার মত হয়তো কোন যোগ্যতা ও আমার নেই। কারণ এখন কিছু লেখতে গেলেই এসে বলবে ভাই আপনি নিজে পারলে বানিয়ে আনেন। আসলে সমস্যা আমাদের পরিচালকদের যেমন আছে, সমস্যা স্ক্রীপ্টেও আছে। তবে সমস্যা আরো প্রবল হয় তখনই যখন এখই ভাবে স্ক্রীপ্ট ও পরিচালনা দুটোরই ঘাটতি দেখা যায়। বসগিরি ঠিক তেমন একটি সিনেমা। যেখানে রয়েছে সেই পুরনো ফ্ল্যাট কাহিনী আর বাজে ডিরেকশনের পুনরাবৃত্তি।




বসগিরির কাহিনী নিয়ে আমি তেমন কিছু বলতে যাচ্ছি না, যাস্ট এটাই বলব অতন্ত্য নিম্নমানের একটি স্ক্রিপ্ট। হাসানোর চেষ্টা করানো হয়েছে তাও জোড় করে। মনে হচ্ছে সুড়সুড়ি দিয়ে আপনাকে হাসানোর চেষ্টা হচ্ছে। ২০১৬ সালে এসে যদি মেয়ে পটানোর কাহিনী দেখতে হয়, তাহলে আমি বলব এর থেকে বাসায় বসে টেলিফিল্ম দেখা অনেক ভালো।


কাহিনীর কথা ছাড়ুন, ঐসব বলে আর কোন লাভ নেই আমাদের। কারণ আমাদের পরিচালক প্রযোজক এসবের ধার ধারেন না। তাদের মতে ফেসবুকের আলোচনা সিনেমার ক্ষেত্রে তেমন কোন প্রভাব ফেলে না। সিনেমা হিট করাতে হলে কাকড়াইল পাড়াকে খুশী রাখতে হবে। আপনার কাছে একটা বাজে ডিরেকশন ও উপভোগ্য হতে পারে যদি কাহীনিতে ভালো মশলা থাকে।


বসগিরি এতো আলোচনায় থাকার মূল কাহিনী ছিলো “শাকিব খান”। শিকারীর পর তার নতুন আগমনের বার্তা দেখে আমাদের মত অনেকে খুশি হয়েছিলেন কিন্তু আজকে আবার তিনি হতাশ করলেন। আসলে শাকিব খান সত্যিকার অর্থে নিজের মেধার অবমূল্যায়ন করছেন। তিনি নিজেও হয়তো জানেন না, তিনি কত ভালো নাচতে পারেন। একবার তিনি তার স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিয়ে নিজে নেচে সেই দৃশ্য নিজে মনিটরে দেখুক তাহলে বুঝবে কি করে তিনি নিজেকে শেষ করছেন। পুরো সিনেমায় শাকিব খানের অভিনয় ছাড়া আর কিছু পেলাম না। আমার মনে হয় তাকে ডিরেকশন না দিলে তিনি ভালো অভিনয় করবেন। অ্যাকশন আর অভিনয়ে তিনি বেশ ভালো করেছেন। তবে ঐযে বললাম তিনি আসলেই নিজেকে ধ্বংস করছেন। নিজেকে নিয়ে তার ভাবা উচিত।


নবাগত বুবলি, কি বলব তাকে নিয়ে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এখন নায়ক বা নায়িকা হওয়া রীতিমত আলাদিনের জাদুর প্রদীপের মত। হুট করে একজন চলে এলো আর হয়ে গেলো । ঘষা ঘষি ও লাগেনা এখন। হাঁসি, কান্না, আনন্দ, রাগ সব সময় একই এক্সপ্রেশন। ব্যথা পেলেও যে সুরে কথা বলে রাগলেও সেই সুরে কথা বলে। মনে হচ্ছে আমি একটা রোবোট দেখছি। তাকে আসলেই অনেক পরিশ্রম করতে হবে।


আর অন্য চরিত্র গুলোর মাঝে শুধু সাদেক বাচ্চু ভালো করেছেন। অপ্রিয় হলেও সত্য কথা কি জানেন, আমাদের সিনিয়র আর্টিসগুলো ইদানিং কেন জানি তেমন সুযোগ ও পাচ্ছে না অভিনয় করার। ফলে তাদের ট্যালেন্টের কোন মূল্যায়ন হচ্ছে না। বাকি চরিত্রগুলোর জন্য নাকি এক একজনের চরিত্র এক একটা বিখ্যাত সিনেমা থেকে নেওয়া হয়েছে। আচ্ছা ভাই আমাকে বলেন তো একথা কি কোথায়ও লেখা আছে যে ওই সিনেমা থেকে আপনাকে চরিত্র নিতে হবে? ঠিক আছে আপনি চরিত্র নিলেন কিন্তু আমাকে বুঝান চিকন আলী কেন সারাদিন রেডিও নিয়ে ঘুরবে? একবার ও তো রেডিও শুনতে দেখলাম না? ধানুষের মারির লুক দিয়ছেন শাকিব খানকে। তাও মানলাম, কিন্তু পাতার বিড়ি নিয়ে ৪ টা দৃশ্য করল, মাত্র একবার বিড়িটা ধরালো আর অন্য ৩টা দৃশ্যতে বিড়িটা না ধরিয়ে মুখে নিয়ে কথা বলল। তাহলে বিড়িটা মুখে দেওয়ার কি দরকার? অমিত হাসান তো ভ্যাপার মুখে নিয়ে সংলাপ বলছিলো সাথে সেইটা টেনে ধোয়াও ছাড়ছিল। তাহলে শাকিব খানের ঐ ৩ সময় কেন আগুন না ধরিয়ে বিড়ি মুখে নিয়েই ডায়লগ দিলো?


বুবলি একজন ইন্টার্ন ডাক্তার, আর সে কি করে একজন এফআরসিএস ডাক্তাকে অর্ডার করে ড্রেসিং করে দেবার জন্য? ভাই এইটা কি সার্কাস? সব জায়গায় তো গাঁজাখুরি জিনিস চলে না। আপনি মাথা দেওয়ালে আঘাত করে ফাটাবেন কিন্তু দেওয়ালে রক্ত লাগবে না, আবার ড্রেসিং করবেন কিন্তু রক্ত তুলাতে লাগবে না, এইটা কি ধরনের অবস্থা? উইগ পড়াবেন সেখানে আবার অরিজিনাল চুল বের হয়ে থাকবে এইটা কি সম্ভব? রজতাভ দত্ত সিনেমাতে থাকলে যা হত, না থাকলে এর থেকে বেশি ভালো হত। ভাড়ামো করার জন্য মনে হয় ভাড়া করে নিয়ে এসেছে তাকে। ডাবিং পর্যন্ত করেন নি তিনি।


সব থেকে চোখে পড়ার মত অবস্থা হল গানের দৃশ্যতে শাকিব খানের মুখ ভরা দাড়ি, কিন্তু গান থেকে বের হলেই দাড়ি গায়েব। ইউ রিয়েলে কিডিং মি? মেক সাম সেন্স ম্যান। এইগুলো তো কমন জিনিস, একটু তো বোঝা উচিত। এক ঘন্টার মধ্যে তিনটি গান দেওয়া হয়েছে,তাও দুইটা গান হুট করে চলে এসেছে কোন কারণ ছাড়াই। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এতো লাউড করার মানে বুঝলাম না, সাথে প্রথম এক স্থানে ছিলো তেলুগু বোমারিল্লু এর সেই বিখ্যাত টিউন। এছাড়া মনে হল টাইটেল সং টা জিতের বস মুভির ‘টাইটেল সং” থেকে অনুপ্রানিত। এছাড়া অযাচিত ক্রোমার ব্যবহার সিনেমাটিকে করেছে আরো বেশি খারাপ। নায়ক নায়িকা দেখা হবার পর কয়েক সেকেন্ড হয়তো হ্যাং ওভার থাকতে পারে। কিন্তু এখানে মিনিটের পর মিনিট ধরে ক্যামেরা তাদের চারিদিকে ঘুরছেই তো ঘুরছে, ঘুরছে তো ঘুরছেই, থামার কোন নামই নেই।


পজেটিভ দিক একটাই লোকেশন ভালো, লং শট গুলো ভালো নেওয়া হয়েছে। গানগুলো আসলেই দারুণ এবং সুন্দর কোরিওগ্রাফী। এছাড়া বসগিরিতে আসলে কিছুই নেই।


কয়েকটা কথা বলতে চাই, দেখুন নিউ লুক এই লুক সেই লুক এসব দিয়ে সিনেমা খাওয়ানো যায় না। একটা ভালো গল্পই পারে একটা ভালো সিনেমা দিতে। যতই প্রযুক্তি আনুন বা গান বানিয়ে ছাড়ুন, ভালো গল্প ছাড়া লুক দিয়ে কিছু হয় না। আমাদের সমস্যা ভালো গল্পে। ধানুশের লুক দিয়ে কিন্তু ধানুশ নায়ক হয়নি, নায়ক হয়েছে তার অভিনয় দিয়ে, আর তাকে সেই অভিনয় দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছে একটা ভালো কাহিনীর সিনেমা। তাই ৩ মাসে সিনেমা নামানোর কথা বাদ দিয়ে আগে ভালো একটা গল্প তৈরী করুণ। এভাবে আর কতদিন। আর শাকিব খান আসলেই নিজের ট্যালেন্ট নষ্ট করছে। সব মিলিয়ে বসগিরি খুবই নিম্নমানের সিনেমা যেখানে কাহিনীর কোন অস্তিত্ব নেই। ইচ্ছা হল একটা কাহিনী বানিয়ে ফেললাম।


রেটিংঃ ৪/১০