কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

ইসলামিক শিক্ষা September 11, 2016 1,088
কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

‘কোরবানি’ ইসলামের ধর্মীয় পরিভাষাগুলোর মধ্যে একটি প্রসিদ্ধতম পরিভাষা। কোরবানি শব্দটি বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত একটি বিদেশি শব্দ। শব্দটি আরবি ও ফারসি উভয় ভাষা থেকেই আসতে পারে। আরবিতে কোরবানি শব্দের অর্থ নৈকট্য আর ফারসিতে শব্দটি ত্যাগ অর্থে ব্যবহার হয়। ইসলামের ধর্মীয় পরিভাষায় কোরবানি বলতে ‘মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় নির্দিষ্ট শ্রেণির পশুগুলোর মধ্য থেকে কোনো পশুকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদের সালাত আদায়ের পর থেকে ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত) আল্লাহর নামে জবাই করাকে বোঝায়। বস্তুত আল্লাহর রাস্তায় বান্দার কোরবানি বা ত্যাগই তাকে মহান আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্য এনে দেয়, তাই কোরবানিকে এই নামকরণ করা হয়েছে।


কোরবানির গুরুত্ব

মুমিন বান্দার জীবনে কোরবানির গুরুত্ব সীমাহীন। কারণ মুমিনের জীবনের একমাত্র আরাধনা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আর কোরবানি তাকে অত্যন্ত দ্রুত স্থানে পৌঁছে দেয়। খলিলুল্লাহ হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) আত্মত্যাগের বলিষ্ঠ পরাকাষ্ঠা স্থপন করেই মহান মাওলার নৈকট্যের সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ছিলেন নিঃসন্তান। খোদাদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামরত, জীবন সায়াহ্নে উপনীত। বয়সের আশি পেরিয়ে যাওয়া হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনের পতাকাবাহী একজন উত্তরসূরি রেখে যাওয়ার আকুতি জানিয়ে মহান রবের দরবারে দীর্ঘদিনের কাকুতি-মিনতির পরে লাভ করেছিলেন একটি পুত্রসন্তান। জীবনের পড়ন্ত বিকেলে জাগতিক নির্ভরতার একমাত্র সম্বল পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর নামে কোরবানি করেন হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং মহিমাময় আল্লাহর মহান ইচ্ছা পূরণে নিজেকে তীক্ষ্ণ খঞ্জরের নিচে সঁপে দিয়ে হজরত ইসমাইল (আ.) আত্মত্যাগের যে মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, সেই মহান স্মৃতির পুনরাবৃত্তিতেই ইসলামের কোরবানির বিধানকে সীমাহীন গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। যার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ভোগে নয়, ত্যাগেই আত্মার পরিপূর্ণতা। পবিত্র কোরআনের বর্ণনায় ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মৃতিকথা বিবৃত হয়েছে এভাবে- অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সাথে চলাফেরার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহিম তাকে বলল : বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি তোমাকে জবাই করছি; এখন তোমার অভিমত কী সেটা ভেবে বল। সে বলল, পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী হিসেবে পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহিম তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করলেন। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহিম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সুরা আস-সাফফাত : ১০২-১০৫)


কোরবানির ফজিলত

আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা আল্লাহর নামে কোরবানি করে তাদের জন্য সীমাহীন সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোরবানির দিনে কোরবানি করাই সবচেয়ে বড় ইবাদত। কোরবানির জন্তুর শরীরের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে কোরবানিদাতাকে একটি করে সওয়াব দান করা হবে। কোরবানির পশুর রক্ত জবাই করার সময় মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহ দরবারে কবুল হয়ে যায়। (মেশকাত) কোরবানির বিনিময়ে সওয়াব পেতে হলে অবশ্যই কোরবানিটা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে। মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, কোরবানির জন্তুর রক্ত-মাংস কোনো কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় না। তাঁর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের অন্তরের তাকওয়া। (সুরা আল-হাজ : ৩৭)


কোরবানির মাংস বণ্টন

কোরবানির মাংস তিন ভাগে বণ্টন করা মুসতাহাব। এক ভাগ কোরবানিদাতার নিজের ও পরিবারের জন্য, একভাগ তার আত্মীয়স্বজনদের জন্য আর একভাগ গরিব-মিসকিনদের জন্য। অনেকে মিসকিনদের এক টুকরো করে দিয়ে সব মাংস ফ্রিজে ভরে রেখে দেন। আবার অনেকে ফকির সেজে মাংস জমা করে বিক্রি করেন। কোনোটাই উচিত নয়। যদি কারো পরিবারের সদস্যসংখ্যা এত বেশি হয় যে, কোরবানির মাংস সবটুকু তাদের ঈদের দিনের খাবারের জন্য প্রয়োজন, তাহলে তার জন্য সম্পূর্ণ মাংস নিজের পরিবার নিয়ে খাওয়া জায়েজ এবং উত্তম। আমাদের সবার কোরবানি আত্মত্যাগের মহান প্রেরণায় মহান আল্লাহর উদ্দেশে নিবেদিত হোক!