গান বাজিয়ে কোরবানির হাটে পশু বিক্রি, বন্ধ চান আলেমরা

ইসলামিক সংবাদ September 8, 2016 1,322
গান বাজিয়ে কোরবানির হাটে পশু বিক্রি, বন্ধ চান আলেমরা

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে জমে উঠছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। দুই-একদিনের মধ্যে হাটগুলো পুরোদমে জমে উঠবে। এরই মধ্যে বেচাকেনা জমিয়ে তুলতে অনেক জায়গায় হাট কর্তৃপক্ষ প্রচার-মাইকে গানবাজনা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আলেমরা বলছেন, ইসলামে কোরবানির পবিত্রতা অনেক; সেখানে পশুর হাটে গানবাজনা শরিয়ত বহির্ভূত। এটি মসজিদে গান বাজানোর মতোই পাপ কাজ।


এদিকে বিষয়টি নিয়ে হাটগুলোর আশেপাশের বাসিন্দা ও আলেমদের মধ্যে সমালোচনা তৈরি করেছে। তারা বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন।


শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, ‘কোরবানির পশু কেনা, জবাই ও বিক্রি করা-সবই ইবাদত। আত্মত্যাগের যে শিক্ষা, সেটি তো কোরবানির ঈদ আমাদের দেয়। এ কারণে গানবাজনা পবিত্র আবহ নষ্ট করে। এটি অনেকটাই মসজিদে গানবাজনা করার মতো। এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কোরবানির মেজাজের মধ্যে গানবাজনা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’


মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, ‘কোরবানির হাটে গানবাজনার কারণে আরো অনেক সমস্যা হয়। রাতভর মাইক বাজালে মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। অসুস্থ মানুষের কষ্ট হয়। একটি



গর্হিত কাজ অনেকগুলো গর্হিত কাজের জন্ম দেয়।’


মাসঊদ এ ধরনের গর্হিত কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও হাট কর্তপক্ষকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। অন্যান্য অপরাধ যেভাবে প্রতিরোধ করা হয়, কোরবানির হাটে গানবাজনাও সেভাবে বন্ধ করতে হবে।’


হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগরীর প্রধান উপদেষ্টা মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাছ বলেন, ‘যারা কোরবানির হাটে গানবাজনা করে পশু বিক্রি করে, তারা নিঃসন্দেহে গোনাহগার হবে। যারা কিনতে যায়, তারা হয়তো বাধ্য হয়ে কেনে; কিন্তু ইজারাদাররা গোনাহগার হবে।’


হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘কোরবানি হচ্ছে ত্যাগের বিষয়। আর গানবাজনা হলো উন্মাদনা। কোনওভাবেই কোরবানির পশুর হাটে গানবাজনা বরদাশত করা ঠিক না। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও হাট কর্তৃপক্ষকে সচেতন হতে হবে।’


আজিজুল হক বলেন, ‘কোরবানির পশু কেনা, পছন্দ করা, দেখা-সবই ইবাদতের অংশ। ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত কোরবানি। ইবাদতে গানবাজনা কেন হবে? এটা হারাম। এটা নিষিদ্ধ। এছাড়া কোরবানির হাটে দালালি করা, ট্রাক ঠেকিয়ে চাঁদা তোলাও নিষিদ্ধ।’


রাজধানীর আফতাবনগর, মেরাদিয়া, নয়া বাজার ও শনির আখড়া এলাকায় কোরবানির পশুর হাটে মাইকে প্রচারণার পাশাপাশি গান বাজানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মেরাদিয়া হাটে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে রাতভর মাইক বাজানো।


দক্ষিণ বনশ্রী আবাসিক এলাকার ভেতরে বসানো হয়েছে হাট। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে।


সাংবাদিক রফিক রাফি বাস করেন রাজধানীর নয়া বাজার এলাকায়। তিনি জানান, এ বছর তিনি এখনও হাটের আশেপাশে যাননি। তবে গত বছর ধোলাইখাল সাদেক হোসেন খোকা মাঠে গানবাজনা হয়েছে। ইজারাদারদের মাইকে ক্রেতাদের ডাকা হয়। আর ডাকার ফাঁকে ফাঁকে চলে গানবাজনা। বিশেষ করে রাতে গান বাজানো হয় বেশি।


রামপুরা এলাকার বাসিন্দা মাওলানা মাসঊদুল কাদির। তিনি বলেন, ‘মেরাদিয়ায় হাট বসেছে। কিন্তু মাইক লাগানো হয়েছে পাঁচ কিলোমিটার দূরে; রামপুরার কাছে। এরপর সারাক্ষণ বাজছে গান। এতে অস্বস্তি লাগছে।’


মিরপুর এলাকায় থাকেন উন্নয়নকর্মী তারেক মাহমুদ সজীব। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘গাবতলীর হাটে কোনও দিন গান শুনিনি।’ -বাংলা ট্রিবিউন