তরমুজের পুষ্টিগুণ

ফলের যত গুন September 2, 2016 1,821
তরমুজের পুষ্টিগুণ

সারাদিনের গরমে যখন সবাই ক্লান্ত তখন এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানিই এনে দেয় সতেজতা । ক্লান্তি এড়াতে আমরা ঠাণ্ডা শরবত বা বাণিজ্যিক জুস খেয়ে থাকি । কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তাতে আবার ওজন বেড়ে না যায় । তাই এই গরমে ক্লান্তি এড়াতে আমরা তরমুজ খেতে পারি যা আমাদের সবার হাতের নাগালের মধ্যেই রয়েছে ।



* তরমুজে পানির পরিমাণ শতকরা ৯২ ভাগ । এতে ক্যালরির পরিমাণও অনেক কম। এছাড়াও এতে রয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান । ভিটামিন সি, থায়ামিন ও ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি আছে তরমুজে। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই এবং কোনো সম্পৃক্ত চর্বিও নেই ।


* গবেষণায় দেখা গেছে যে, তরমুজে মাত্র ৩০ ভাগ ক্যালরি থাকে । এত কম ক্যালরি থাকার কারণে তরমুজকে ওজন কমানোর একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা যায় ।


* ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে । প্রতিদিনের খাবারের ক্যালরি এমন হওয়া উচিত যা শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরি থেকে কম হবে ।


* তরমুজে চিনির পরিমাণ খুবই কম। মাত্র ৬ ভাগ চিনি এর মধ্যে বিদ্যমান। রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীর থেকে বেশি বেশি ইনসুলিন নিঃসরিত হয় যার কারণে শরীরে চর্বি জমতে থাকে । তরমুজে যেহেতু চিনি কম তাই এটি বেশি পরিমাণে খেলেও চর্বি জমার কোনো সম্ভাবনা নেই ।


* তরমুজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি কিন্তু গ্লাইসেমিক লোড অনেক কম। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল, খাবারে শর্করার পরিমাণ যা সরাসরি রক্তে চলে যায় এবং প্রভাব ফেলে। গ্লাইসেমিক লোড হল খাবারের কত গ্রাম শর্করা রক্তে যায় তার পরিমাণ। তরমুজের যেহেতু গ্লাইসেমিক লোড অনেক কম তাই বেশি পরিমাণে খেলেও রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়বে না ।


* তাই এই গরমে ওজন কমাতে প্রচুর পরিমাণে তরমুজ খেতে পারেন। তবে যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে ।


* তরমুজে আঁশ এর পরিমাণ অনেক বেশি । আঁশযুক্ত খাবার শরীরে বিপাকক্রিয়ায় হজম হতে অনেক সময় নেয় । আর তরমুজে যেহেতু পানির পরিমাণও বেশি থাকে তাই খাওয়ার পর অনেকক্ষণ ক্ষুধা বোধ হয় না । এ কারণে যাদের ঘন ঘন খাওয়ার অভ্যাস তারা এই গরমে বেশি পরিমাণে তরমুজ খেতে পারেন । তাতে আপনার ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না ।


* তরমুজ খুব ভাল পানি নিঃসরণকারী হিসেবে কাজ করে । এতে উপকারী মিনারেল সোডিয়াম ও পটাসিয়াম থাকে যা শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি দূর করে ।


* আমরা সাধারণত তরমুজের লাল অংশটাই খেয়ে থাকি । কিন্তু এর সাদা অংশটাও বেশ উপকারী। এর সাদা অংশে ‘সাইট্রুলিন’ নামে একটি অ্যামাইনো এসিড থাকে যা খেলোয়াড়দের জন্য খুবই উপকারী।


* খেলোয়াড় বা যারা ব্যায়াম করে তাদের মাংসপেশীতে খুব দ্রুত শর্করার পরিমাণ কমে যায় । তাই তারা খুব সহজেই অবসাদ বোধ করে ।


* তরমুজের ‘সাইট্রুলিন’ মাংসপেশীর এই অবসাদকে দূর করে যা একটানা অনেকক্ষণ ব্যায়াম করতে সহায়তা করে। তাই তরমুজ কাটার সময় সাদা অংশটা কিছুটা গাঢ় করে কাটা উচিত।


* এছাড়া তরমুজের পটাসিয়াম শরীরের অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্যতা রক্ষা করে যা শরীরে শক্তি যোগায় । তাই এই গরমে খেলাধুলা বা বায়ামের পরে ক্যালরিযুক্ত বাণিজ্যিক জুস না খেয়ে তরমুজের জুস খাওয়া যেতে পারে।


* তরমুজে ‘লাইকোপিন’ থাকে যা এর লাল রং এর জন্য দায়ী। লাইকোপিন একটি অক্সিজেন যা শরীরকে ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করে। লাইকোপিনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।


* এছাড়াও তরমুজ ত্বক পরিষ্কার রাখে। ত্বককে করে তোলে আরো সতেজ ও প্রাণবন্ত । তাই এই গরমে ওজন কমানোর পাশাপাশি হয়ে উঠুন আরো সুন্দর ।