তোমাকে ঠিক চেয়ে নেব - ৩

ভালোবাসার গল্প September 2, 2016 2,183
তোমাকে ঠিক চেয়ে নেব - ৩

পিথাগোরাসের বিশাল উপপাদ্যটা বুঝাতে বুঝাতে আমি আবিষ্কার করলাম , তিহার মনটা আজকে বেশ খারাপ । সে পড়ায় মন দিতে পারছে না । খুবই স্বাভাবিক , পড়ায় প্রতিদিন মন বসবে এমন কোন কথা নেই । মনের ও মুড বলে একটা ব্যাপার আছে । আমি পড়া থামিয়ে গালে হাত দিয়ে বললাম , '' উপপাদ্য টা ভীষণ পচা , তাইনা তিহা ? একদম বোরিং ।'' তিহা ফিক করে একটু হাসল । ও আমার কাছে কখনো কিছু লুকায় না । এবারো লুকোল না , মলিন গলায় বলল , '' আপু , মন খারাপ থাকলে ভাল পড়াগুলিও বোরিং হয়ে যায় ।'' কথা সত্য । কেন মন খারাপ সেটা জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে কিনা ভাবতে ভাবতেই ও বলল , '' আপু জানেন , ভাইয়া না মাদ্রাজ যাচ্ছে আগামী মাসে , কি ডিগ্রি ফিগ্রি নিবে , আমি তো বুঝিনা । ভাইয়ার জন্যে অনেক খারাপ লাগবে আমার । ঝগড়া করলেও তো আমারই ভাইয়া ।তাই পড়াতেও মন দিতে পারছি না । '' কি বলে তিহা ? ফারাবী ভাই মাদ্রাজ কেন যাবে ? এত ডিগ্রি দরকার কেন তার ? আমার চোখ দুটো পিথাগরাসের উপপাদ্যের মাঝে অযথাই এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে লাগল । এতক্ষন শুধু ছাত্রীর মন খারাপ ছিল , তাও পড়া যা একটু আগাচ্ছিল , কিন্তু যখন আমার ও ভয়াবহ মন খারাপ হতে লাগল তখন আর পড়া কিভাবে আগায় ? '' তোমার মন যেহেতু খারাপ আজ বরং একটু রিল্যাক্স থাকো ,আমি আসি '' বলে আমি পালিয়ে গেলাম । কিন্তু নিজের কাছ থেকে নিজে তো পালানো যায় না ।


আমি জানতাম আমি ফারাবী ভাই কে পাব না , একদিন না একদিন আমাকে অনেক কিছু এই চোখেই দেখতে হবে । কিন্তু আমি তো একদিন একদিন করে বেঁচে থেকে অভ্যস্ত হয়ে গেছি , তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনই বেশিদূর ভাবতে পারতাম না । হাসতে হাসতে দিন কাটিয়ে কখন যে তাকে হারাবার দিন এগিয়ে এল সেটা টের ই পেলাম না । এখন সে চোখের আড়াল হবে , দুদিন বাদেই অন্য কারো সম্পদ হবে । আর আমি ফারাবী ভাইকে না পাওয়ার লিস্টে যুক্ত হব সবার চোখের আড়ালে । আমি কিন্তু অল্পতেই কেঁদে চোখ লাল করার মেয়ে , কিন্তু আজ আমি একটুও কাঁদলাম না । আজ আমি ভীষণ পরিনত ।


ছোটবেলা থেকেই রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা আমি । খুব রাগ হলে চিৎকার করি , কিছুক্ষন পর যখন বুঝতে পারি যে চিৎকার করা ঠিক হয়নি তখন শব্দ না করে কাঁদি । আমার এতদিনের লুকোচুরি ভালবাসাটা হুট করে ভেঙ্গে যাওয়ায় যে কষ্ট আমার হচ্ছিল তা কিভাবে কিভাবে যেন রাগে রুপান্তরিত হয়ে গেল । সেই রাগে আমি না পারলাম চিৎকার করতে , না পারলাম কাঁদতে । ফলস্বরূপ পরদিন প্রচন্ড মাথাব্যাথায় ঘুম থেকে উঠলাম চোখ মুখ লাল করে । মাথাব্যাথায় রাতে এসে গেল সেই লেভেলের জ্বর । আমি প্যারাসিটামল নাপা ইত্যাদি ইত্যাদি সেবন করতে লাগলাম , এতদিনের অভিজ্ঞতা বলে তো একটা কথা আছে । পরের দিন সকালে কোন মাথাব্যাথা নেই , জ্বর নেই , কিন্তু এসিডিটির যন্ত্রণায় সোজা হতে পারলাম না । ভাবতে পারছিলাম না , কি পরিমান রাগটাই না করেছিলাম , মাথাব্যথা আর জ্বর দিয়ে বের হয়ে কুলাতে পারল না , এখন আবার এসিডিটি শুরু হয়েছে ! এরই মাঝে ডজনখানেক বার করে আম্মু আব্বু বলেছে ডাক্তারের কাছে যেতে , আমি ঘাড় বাকা করে বলেছি ,'' এমনেই সেরে যাবে ।''


বিকেল বেলায় যখন ১০০ ডিগ্রি জ্বর , হালকা মাথাব্যথা আর এসিডিটি তিনটাই হাজির হল , আম্মু তখন ভয় পেয়ে বলল ,'' রেডি হ ।'' আমি বিরক্ত হয়ে বললাম ,'' মরার জন্য ?'' '' থাবড়ায়া কানের পর্দাটা ফাটায় দিবো ।'' '' আচ্ছা দিও ।'' '' উঠতেছিস না কেন ? ডাক্তারের কাছে যাব চল ।'' ঘ্যানর ঘ্যানর চলতেই লাগল । শেষমেশ উঠলাম , ভাবলাম লাস্ট বারের মত তাকে দেখে আসিগে । আজকের পর আর কক্ষনো তার কথা ভাববনা । আম্মু কে বললাম , আমি একাই যেতে পারব ।


একা একা যেটা শুরু করেছিলাম , আজ কে একা একাই তার শেষ দৃশ্য টা দেখে আসি ।

চলবে...