কক্সবাজারে মিনি সুন্দরবন

দেখা হয় নাই August 31, 2016 3,573
কক্সবাজারে মিনি সুন্দরবন

কক্সবাজার শহরের কাছেই বাঁকখালী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মিলন মোহনায় গড়ে উঠেছে মিনি ‘সুন্দরবন’। এই বনে রয়েছে বাইন, কেওড়াসহ নানা প্রজাতির অসংখ্য উদ্ভিদ। ওখানে নির্বিঘ্নে উড়ে বেড়ায় ঝাঁকে-ঝাঁকে বক ও পরিযায়ী পাখিরা।


জেলা শহর থেকে নদীপথে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালি ও কুতুবদিয়া উপকূলে যাতায়াতের পথে বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষে ছয়শত হেক্টর জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে বনটি। সাগর, নদী, সবুজ আর শত প্রাণবৈচিত্র্যের অপূর্ব এই প্রাকৃতিক স্থানটিকে ঘিরে এখন বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনেক স্বপ্ন, অনেক কর্মযজ্ঞ। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সাগর সৈকতের শহর কক্সবাজার ভ্রমণে আসা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে এই ‘মিনি সুন্দরবন’ কে আকৃষ্ট করতে সৈকতের নুনিয়াছড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্র।


কক্সবাজারের এই সুন্দরবন এতদঞ্চলের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এমনটি মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গোলাম কিবরিয়া খান।


প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বরত সংস্থা নেক্মের সমন্বয়কারী শফিকুর রহমান জানান, অনেকটা সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা কক্সবাজারের এই বনকে রক্ষার মধ্যদিয়ে অসংখ্যা জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করা হবে। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত স্থানটি কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন এই প্রাকৃতিক নদী-সাগরবেষ্টিত বনে শুধু পর্যটকের ঢল নামবে না, এটি হবে চলচ্চিত্রের চিত্র ধারণের একটি অদ্বিতীয় স্থান।



কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এই বনে ২০৬ প্রজাতির পাখির বিচরণ রয়েছে। এর মধ্যে দেশি ১৪৯ টি এবং অতিথি পাখি রয়েছে ৫৭ টি প্রজাতির। বিশ্বে বিলুপ্ত প্রায় অনেক পাখিও এখানে দেখা যায়। এ ছাড়া বনে বানর, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, কাছিম ও চিংড়ি সহ নানা প্রজাতির মাছ এবং বহুপ্রজাতির সরীসৃপ প্রাণীর দেখা মিলছে।


নেকমের যোগাযোগ কর্মকর্তা বিশ্বজিত সেন বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনে এবং পরিবেশের বিরূপতায় গত কয়েক বছরে বহুপ্রজাতির প্রাণি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই কারণে এই রকম বনসৃজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী দুই-তিন বছর পর বনটির গাছগুলোর উচ্চতা আরও বাড়বে। ওই সময় সৌন্দর্য্যও বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।


নুনিয়াছড়া ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ আলম জানান, এখানে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের সহযোগিতায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। ওই টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যটকরা স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখিসহ প্রাকৃতিক নানাবিধ সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে পারবে। এতে পাখি ও বন্যপ্রাণী গবেষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি হবে। পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে।


মোঃ আলম আরও জানান, এই বন রক্ষার জন্য স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়েছে। তিনটি মামলার আসামীও হতে হয়েছে।


বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার জেলা কমিটির সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, কক্সবাজারে যে মিনি সুন্দরবন গড়ে তোলা হয়েছে তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। ব্যাপক পর্যটকের উপস্থিতি ঘটলে বনের প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা থেকে যায়। যান্ত্রিক কোন নৌযান চলাচলও বন এলাকায় সীমিত রাখতে হবে। ব্যবস্থাপনা খাতের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য বনে ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে সামান্য টোলও আদায় করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

তথ্যসূত্র : রাইজিং বিডি