কাঠালের বীচির অজানা গুন

ফলের যত গুন August 29, 2016 2,533
কাঠালের বীচির অজানা গুন

কাঠালের বীচি এদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। এটি আলুর রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে মুরগী/গরুর মাংসের তরকারী, শুটকী বা মিক্সড সব্জী/নিরামিষে ব্যবহৃত হয় এমনকি ঠিক আলুর চপের মতো করে চপ ও বানানো যায়। এছাড়া শুধুমাত্র কাঠালের বীচির ভর্তা অথবা বীচি ফ্রাই ও খুব জনপ্রিয় খাবার। জনপ্রিয় হলেও আমরা এই খাবারটার পুষ্টিগুন তেমন জানিনা।

আসুন আজ জেনে নেই।


প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠালের বীচিতে এনার্জি পাওয়া যায় প্রায় ৯৮ ক্যালোরি। এতে চর্বি আছে ০.৪ গ্রাম, প্রোটিন আছে ৬.৬ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট আছে ৩৮.৪ গ্রাম এবং ফাইবার আছে ১.৫ গ্রাম.এছাড়াও কাঠালের বীচিতে আছে নানা ধরণের ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট।


প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠালের বীচিতে আছে – ক্যালসিয়াম ০.০৫ থেকে ০.৫৫ মিগ্রা, ফসফরাস ০.১৩ থেকে ০.২৩ মিগ্রা, আয়রন ০.০০২ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৪.০৭ গ্রাম, ভিটামিন এ ৫৪০ আন্তর্জাতিক ইউনিট, থায়ামিন ০.০৩ মিলিগ্রাম, নায়াসিন ৪ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন সি আছে ৮ থেকে ১০ মিলিগ্রাম।


কাঠালের বীচি ভিটামিন B1-এবং ভিটামিন B12 এরও ভাল উৎস। কাঠালের বীচিতে থাকা লিগন্যান, আইসোফ্ল্যাভোন, স্যাপোনিন কে বলা হয়, ফাইটোক্যামিকেলস যা নানা রোগ হতে সুরক্ষার জন্য দায়ী।


১. প্রথমত, এতে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং বার্ধক্যের দ্রুত আনয়ন রোধ করে।


২. দ্বীতিয়ত, ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এর কারণে এর গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম। ফলে উচ্চ শক্তিদায়ক খাবার হলেও এতে ওজন বৃদ্ধি হবে কম। পশ্চিমা বিশ্বের ফুড সায়েন্টিস্ট রা তাই কাঠালের বীচির পাউডার কে ময়দা হিসেবে ব্যবহার করে কেক,বিস্কিট বানানোর লক্ষ্যে গবেষনা করে যাচ্ছেন।


৩. এটি একটি উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার। গরীব দেশে যাদের মাছ, মাংস কম খাওয়া হয়, এই সিজনে কাঠালের বীচি হতে পারে তাদের আমিষের চাহিদা পূরণের অস্ত্র।


৪. কাঠালের বীচির জীবানুনাশক গুনও আছে। এটি Escherichia coli ও Bacillus megaterium ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর এবং এতে থাকা বিশেষ উপাদান (Jacalin) এইডস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়নে সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে।


৫. এছাড়াও উচ্চ পটাশিয়াম এর কারণে এটি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে রাখে।


এছাড়াও বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে কাঠালের বীচির যেসব গুন গুলো বলা হয়ে আসছে তা হলো-


1. এটি মদের প্রভাব কাটায়।

2. কাঠালের বীচি হলো aphrodisiac অর্থাৎ এটি যৌন আনন্দ বাড়ায়।

3. এটি টেনশন ও নার্ভাসনেস কাটায় বলেও ধারণা করা হয়।

4. হজমে সহায়তা করে।

5. কোষ্টকাঠিন্য দূর করে।


এদেশের মত গরীব দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে কাঠালের বীচি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে পারে। যেহেতু এটি সংরক্ষন যোগ্য তাই শুধু সিজনে নয়, এটি হতে পারে সারা বছরের পুষ্টির যোগান দাতা। কাঠালের বীচির এতসব গুনের কারণে, পশ্চিমা বিশ্বের ফুড সাইন্টিস্টরা বীচি হতে ময়দা তৈরী, সিরিয়াল তৈরী,মিল্ক তৈরী এমনকি বাটার তৈরীর প্রকৃয়া নিয়ে গবেষনা করে যাচ্ছে। এদেশে যেহেতু কাঠাল সহজলভ্য, দেশী উদ্যোক্তারাও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেন।