মার্কিন সেনাবাহিনীতে মুসলমানের সংখ্যা কত?

জানা অজানা August 15, 2016 1,504
মার্কিন সেনাবাহিনীতে মুসলমানের সংখ্যা কত?

যুক্তরাষ্ট্র সশস্ত্র বাহিনীতে কতজন মুসলমান রয়েছেন সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ, ৪ লাখ সৈন্য নিজেদের ধর্ম পরিচয় প্রকাশ করেননি। মাত্র ৬ হাজার নিজেদের মুসলমান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পেন্টাগণ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


সশস্ত্র বাহিনীর এসব সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন এবং কখনো কখনো নিজের জীবনও উৎসর্গ করছেন।


এতদসত্বেও রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক মুসলিম-আমেরিকানদের দেশাত্মবোধ নিয়ে যে প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে, তা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষকেই পীড়া দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের ভূমিকা শীর্ষক ইতিহাস থেকে দেখা গেছে, জন্মলগ্ন থেকেই মুসলমানেরা আমেরিকান হিসেবে যথাসাধ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন।


২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার সময়েও মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত মুসলমানেরা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। কখনো নিজেদের আলাদা করে ভাবেননি।


মুসলিম-আমেরিকানদের দেশাত্মবোধের আলোকে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন ডেভিড ওয়াশবার্ণ। এই পরিচালক বলেছেন, মুসলিম-আমেরিকান ভেটার্নস এবং কর্মরত সৈনিকেরা সশস্ত্র বাহিনীতে এমন একটি স্থান দখল করে রয়েছেন যেখানে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্যে বলিদানের বিষয়াবলী উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। নিজেরা নানাকারণে বৈষম্যের শিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে পালনে সক্ষম না হলেও তারা কখনো নিজেদেরকে অ-আমেরিকান ভাবেননি।


ডেমক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে ইরাক যুদ্ধে শহীদ মার্কিন ক্যাপ্টেন হুমায়ূন খানের পিতা খিজির খানের বক্তব্যের পর রিপাবলিকান ট্রাম্পের অযাচিত মতামত ব্যক্ত এবং সমগ্র মুসলিম সমাজের তিরস্কার করার ঘটনা বিবেকসম্পন্ন প্রতিটি আমেরিকানকে হতবাক করেছে।


প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করে এক পর্যায়ে মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন যে, প্রেসিডেন্ট হবার কোন যোগ্যতাই নেই ট্রাম্পের। নির্মাণাধীন এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে হুমায়ূন খানের মত অসংখ্য মুসলিম আমেরিকানের জীবন উৎসর্গ করার তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে এবং এর মধ্য দিয়েই হয়তো মুসলিম-আমেরিকানদের দেশপ্রেমের প্রশ্নটি মাটিচাপা পড়ে যাবে-প্রত্যাশা পরিচালক ওয়াশবার্নের।


হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্পের মত ব্যক্তি কর্তৃক মুসলিম-আমেরিকান শুধু নন, সারাবিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়কে কটাক্ষ করে যে বক্তব্য এসেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আমেরিকানও ক্রমান্বয়ে বিতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছেন প্রতিবেশী মুসলমানদের ব্যাপারে। যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধ আর নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানই নিশ্চিত করেছে সকল ধর্মের সমানঅধিকার।


উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে মুসলিম আমেরিকানদের একটি ডাটাবেজ তৈরি এবং পৃথক আইডি ইস্যুর প্রস্তাব করেছেন ট্রাম্প। একইসময় মুসলমানদের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন বন্ধের অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেছেন। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের শেয়ার করেছেন ৫০ শতাংশ আমেরিকান।


এ অবস্থায় বিদেশে আমেরিকার শত্রুদের বিরুদ্ধে মুসলিম সৈন্যদের যুদ্ধে লিপ্ত হতে কীভাবে নির্দেশ দিবেন মার্কিন কমান্ডারেরা-এমন কথাও বলেছেন ওই পরিচালক। তবে, আশার কথা হচ্ছে যে, রিপাবলিকান পার্টির উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই ট্রাম্পের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তারা প্রশংসা করেছেন হুমায়ূন খানের বিরোচিত ভূমিকার।


যদিও সামরিক বাহিনীতে এখনও দাঁড়ি রাখা কিংবা টুপি ব্যবহারের রেওয়াজ চালু হয়নি। এমনকি হালাল খাদ্যেরও কোন নিশ্চয়তা নেই। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীতে মাত্র ৫ জন ইমাম রয়েছেন।