পৃথিবীর ভয়াবহ ও ব্যয়বহুল দুর্ঘটনা (শেষ পর্ব)

জানা অজানা July 31, 2016 1,772
পৃথিবীর ভয়াবহ ও ব্যয়বহুল দুর্ঘটনা (শেষ পর্ব)

পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে মানুষ বিভিন্ন দুর্ঘটনার ভেতর দিয়ে গেছে। কিছু দুর্ঘটনা ইতিহাসের অংশ হিসেবে টিকে আছে। প্রাণহানি, ভয়াবহতা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ আর্থিক ক্ষতির কারণে কিছু কিছু দুর্ঘটনা পৃথিবী যতদিন থাকে ততদিন এই ক্ষত বয়ে বেড়াবে।


আর দুর্ঘটনার কথা শুনলেই তো চোখে ভেসে উঠে হতাহতের স্বজনদের আহাজারিময় দৃশ্য।


• আর্থিক ক্ষতি ও প্রাণহানির দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ ১০টি দুর্ঘটনার খবর তুলে ধরা হলো.....


পাইপার আলফা অয়েল রিগ : তেল উত্তোলনকারী কোম্পানির দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে পাইপার আলফা অয়েল রিগের দুর্ঘটনা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। একটা সময় ছিল এই কোম্পানি পৃথিবীর সর্বোচ্চ তেল উত্তোলনকারী ছিল। দৈনিক ৩ লাখ ১৭ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করত। ১৯৮৮ সালের ৬ জুলাই এই কোম্পানিতে ঘটে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। তেল উত্তোলনের পাইপে তরল গ্যাস উৎপাদন বন্ধের জন্য নিত্যদিন ১০০টি সেফটি ভাল্ব খুলে পরীক্ষা করত টেকনেশিয়ানরা। কিন্তু ওইদিন ভুলক্রমে একটি ভাল্ব লাগাতে ভুলে যায় তারা। রাত ১০টার দিকে একজন টেকনেশিয়ান তরল গ্যাস পাম্প করার জন্য স্টার্ট বোতামে চাপলে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুই ঘণ্টার মধ্যে ৩০০ ফুট উচ্চতার প্লাটফর্মের পুরোটাতে আগুন ধরে যায়। শেষ পর্যন্ত পুরো প্লাটফর্ম ধসে যায় এবং এতে ১৬৭ জন শ্রমিক নিহত হয়। আর আর্থিক ক্ষতি হয় ৩ দশকিম ৪ বিলিয়ন ডলার।


স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার বিস্ফোরণ : ১৯৮৬ সালের ২৮ জানুয়ারি স্পেশ শাটল চ্যালেঞ্জার (মিশন এসটিএস-৫১-এল) মহাকাশ যান বিস্ফোরিত হয়। উৎক্ষেপণের ৭৩ সেকেন্ডের মাথায় স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার বিস্ফোরিত হয়।



বিস্ফোরণে মারা যায় সাতজন ক্রু। যাতে আর্থিক ক্ষতি হয় তৎকালীন দুই বিলিয়ন ডলার। বর্তমান হিসাবে যা ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। আর তদন্ত, সমস্যা সমাধান ও অন্যান্য উপকরণ পুনঃস্থাপনের জন্য খরচ ধরা হয় ১ বিলিয়ন ডলার (বর্তমান হিসাব)।


প্রেস্টিজ অয়েল স্পিল : ২০০২ সালের ১৩ নভেম্বর স্পেনের গ্যালিসিয়া উপকূলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ৭৭ হাজার টন তেল ভর্তি একটি জাহাজ গ্যালিসিয়া উপকূলে ঝড়ের কবলে পড়ে।



এতে জাহাজে থাকা ১২টি ট্যাঙ্কার সাগরে পড়ে যায়। এর মধ্যে অর্ধেক ট্যাঙ্কার বিস্ফোরিত হয়ে ২০ মিলিয়ন গ্যালন তেল সাগরে ছড়িয়ে পড়ে। পানিতে ছড়িয়ে পড়া তেল পরিষ্কারের জন্য প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়।


স্পেস শাটল কলম্বিয়া দুর্ঘটনা : নাসার এই মহাকাশযানটি টেক্সাস ও লুইসিয়ানার মধ্যবর্তী স্থানে বিধ্বস্ত হয়।



২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও দুর্ঘটনাকবলিত যান উদ্ধারে মোট ক্ষতি হয় ১৩ বিলিয়ন ডলার।


চেরনোবিল : ২৬শে এপ্রিল, ১৯৮৬ সাল। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আওতাধীন ইউক্রেন ও বেলারুশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলের পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। কেউ কি জানত স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা হবে এটি। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে চারজন কর্মী মারা যায়। কিন্তু পরবর্তীতে ২৩৭ জন মানুষ পারমাণবিক বিকিরণের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে মারা যায় ৩১ জন, যাদের অধিকাংশই উদ্ধারকর্মী।


ঘটনাটি ঘটে রাত দেড়টার কাছাকাছি সময়ে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য মতে, কর্তব্যরত কর্মীদের অবহেলার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার প্রায় ৩০ বছর পর আজও চেরনোবিল এলাকা মানুষশূন্য। বিস্ফোরণস্থলের ৩০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে এখনো নির্ধারিত পোশাক ছাড়া কারও প্রবেশ নিষেধ করেছে দুই দেশের সরকার।



দুর্ঘটনার আগে ওই অঞ্চলে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু ও অনেক মানুষ তেজষ্ক্রিয়তার শিকার হলে সকল অধিবাসীকে ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, চেরনোবিল দুর্ঘটনার কারণে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে এক লাখ ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে।


সরকারি তথ্যমতে, দুর্ঘটনার কারণে প্রায় পঞ্চাশ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ছয় লাখ শিশু। এই দুর্ঘটনার ফলে ২০০বিলিয়ন ডলারের সমমান ক্ষতি হয়। বর্তমানে চেরনোবিল শহরটি পরিত্যক্ত এবং প্রায় ৫০ মাইল এলাকা জুড়ে বলতে গেলে কেউ বাস করে না।