“আশিকী – ২০১৫” মুভি রিভিউ ও মিশ্র অনুভূতি

মুভি রিভিউ July 30, 2016 4,618
“আশিকী – ২০১৫” মুভি রিভিউ ও মিশ্র অনুভূতি

“আশিকী” মাহিয়া মাহির পর জাজ মাল্টিমিডিয়ার নতুন নায়িকা, হালের ক্রেজ “নুসরাত ফারিয়া”র প্রথম মুভি। অনেক কিছু বলার আছে মুভিটি নিয়ে, তার আগে মুভির গল্পের দিকে থেকে একটু ঘুরে আসি।


(রিভিউটি একটু বড় সুতরাং সবাইকে একটু ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য অনুরোধ করা হল)


═════►কাহিনী সংক্ষেপ◄═════


কাহিনী সংক্ষেপ লিখলাম কারন কাহিনী নাই তেমন কোন। নায়িকার চেহারা না দেখে পায়ের ট্যাটু আর চুলের দোলানি দেখেই প্রেমে পরে যায় নায়ক। “Love at back side“ থিওরী নামক নতুন এক থিওরীর সূত্রপাত দেখতে পেলাম, এটাই বা কম কি !!!!!!! এরপর আর কি নায়িকাও নায়কের উদার মনের পরিচয় পেয়ে চেহারা না দেখে তার ফেলে যাওয়া মাথার ক্যাপ নিয়ে সময় অতিবাহিত করতে করতে ভালোবেসে ফেলে। এরপর নায়ক যেখানে নায়িকা সেখানে, নায়িকা যেখানে নায়ক সেখানে এভাবে দৃশ্য চলতে থাকে। নায়কের বড় বোনের ফোনে নায়ক লন্ডনের ট্রেন উঠে, নায়িকাও তার ভাইয়ের ফোনে লন্ডনের ট্রেন উঠে। এখানেও সেই “তুমি যেখানে আমি সেখানে, একই বাঁধনে বাঁধা দুজনে” এই থিওরীর আবির্ভাব। ইগো প্রবলেম এর জন্য নায়িকা নেমে যায় খাদ্য অন্বেষণে, এদিকে ট্রেন ছেড়ে দেয়। “ও ট্রেনের আমার তুমি চলে যেও না, কি দোষ করেছি একা রেখে যেও না” চলে যায় ট্রেন, নায়িকার করুন ডাক ট্রেনের কান পর্যন্ত পৌছায় না। মাঝ রাতে একা নায়িকা রেল স্টেশনে, এরপর কি, কি এরপর, কি কি কি!!!!!!!!!! কি আর হবে, সেই এক কাহিনী। কিছু বখাটের আবির্ভাব, লীলাখেলার চেস্টা, অতঃপর নায়কের আলোর বেগে আবির্ভাব। নায়িকার আবার সেই ক্যাপ আলিঙ্গন করে ভালোবাসা এবং নায়কের আসল পরিচয় প্রকাশ। এরপর এক কুঠিরে রাত্রিযাপন এবং ভালবাসার দুষ্টু-মিষ্টি ভুল। কিন্তু তাদের ভালোবাসার প্রধান বাঁধা তো নায়িকার ভাই, কি সেই বাঁধা??? ভুল তো হয়ে গেছে এখন সেটা সঠিক করার উপায় কি???? জানতে হলে আর কি চলে যান আপনার নিকটস্থ পেক্ষাগৃহে…


নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অঙ্কুশ এবং নায়িকার চরিত্রে “নুসরাত ফারিয়া মাজহার”।


•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

মুভির ভালো, খারাপ অনেক দিকই আছে। ভালো দিক দিয়েই শুরু করছি। দেখি কি কি পেলাম এই মুভি থেকে –


═════►মুভির ভালো লাগার দিকসমূহ◄═════


●মুভির কাহিনী নামে কিছু না থাকলেও মুভিটি আপনাকে শেষ পর্যন্ত দেখতে ইচ্ছা জাগাবে শুধুমাত্র এর হাস্যরস এর কারনে। ১০০% একটি রোমান্টিক কমেডি মুভি “আশিকী”।


●মুভিতে আছে নজরকারা বিদেশী লোকেশন।


●ভালো কিছু গান, আর সংলাপের ধারাবাহিকতা।


●ভিনদেশী ভাষা বলার সাথে সাথে নিচে তার বাংলা সাবটাইটেল দেয়া হয়েছে এবার। সেটা জাজ গত ঈদে মুক্তি প্রাপ্ত মুভি অগ্নি-২ এ করেনি। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হবার পর জাজ এই ভুলটা শুধরে ফেলেছে, এটা দেখে ভালো লেগেছে।


●এবার আসি নতুন মুখ “নুসরাত ফারিয়া”র দিকে। যথেষ্ট প্রতিভাবান, সম্ভবনাময় একজন সাহসী অভিনেত্রীর ছায়া আছে তার মাঝে। সাহসী বললাম কারন প্রথম মুভিতেই যেই খোলামেলা অভিনয় করেছেন, সেটা একজন বাংলাদেশী অভিনেত্রীর পক্ষে সম্ভব না। অনস্ক্রীন কিসিং সীনটা যদিও পুরোটা দেখায় নি, কিন্তু যেটা দেখিয়েছে সেটা হয়তো নতুন কারো পক্ষে করা সম্ভব ছিলো বলে আমি মনে করে। এছাড়া এক্সপ্রেশন গুলো ১০০% নিখুত না হলেও সে প্রশংসার দাবী রাখে। আর তার নাচের পারদর্শীতা তাকে বর্তমানে যে কোন বাংলাদেশী নায়িকার থেকে এগিয়ে রাখবে বলে আমি মনে করি। যদি সে নিজেকে আরো দক্ষ করে তুলতে পারে অভিনয় ও অনান্য ক্ষেত্রে তাহলে অনেক দূর যাবে বলে মনে করি।


●নায়কের ব্যাপারে কিছু বলার নেই। তিনি ভালো নাচতে পারেন এবং ভারামো অভিনয়ে তার উপর এখন কেউ আছে বলে আমি মনে করি না।

““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““`

এবার আশা যাক, মুভির খারাপ লাগার দিকে। খারাপ লাগার দিকগুলো কম হলেও যেগুলো খারাপ লেগেছে সেগুলো আমাদের দেশীয় অর্থাৎ বাংলাদেশী চলচিত্রের জন্য হুমকি বলে আমি মনে করি।


═════►মুভি খারাপ লাগার দিক◄═════


●মুভিটিকে বাংলাদেশী মুভি বললে ভুল হবে। কারন মুভির কোথাও বাংলাদেশী মুভির বা বাংলাদেশের ছিটেফোটাও পায়নি। নায়কের বাড়ি বা নায়িকার বাড়ি জিজ্ঞাসা করলে উত্তর ছিলো “মা বাবা ইন্ডিয়াতে থাকে, আমি এখানে পড়ালেখা করি”। পুরোপুরি বলিউড ধর্মী কলকাতার মুভি বললে ঠিক হত।


●জাজ মাল্টিমিডিয়ার পলিসি যদি হয় শুধু টাকা কামানো তাহলে তারা দেশীয় চলচিত্রের স্বার্থে কোন কাজ করছে না বলে আমি মনে করে। কারন যৌথ প্রযোজনার নামে তারা শুধু নামে মুভি বানিয়ে লাভবান হচ্ছে, কিন্তু আমাদের চলচিত্রে কি পেল সেটা তাদের মুখ্য বিষয় না বলেই দেখতে পাচ্ছি।


●মুভিতে হিন্দি ভাষা ব্যাবহার করা হয়েছে, সেটা প্রবলেম না। প্রবমেল হল এটা তো বলিউড-বাংলাদেশ মুভি না যে হিন্দি ব্যবহার করতেই হবে, কলকাতা-বাংলাদেশে এটা মুক্তি পাচ্ছে সো হিন্দির স্থানে ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করলেই ভালো হত বলে মনে করি।


●জাজ নায়িকা অন্বেষণ না করে এক দুজন ভালো অভিনেতা উপহার দিলে সেটা বাংলা মুভির জন্য খুব উপকার হবে বলে আমি মনে করি। কারন বিদেশী নায়ক দেখলে মনে হয় বাংলাদেশী না ভারতের মুভি দেখতে বসেছি। মানছি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এমন ট্যালেন্ট নাই কিন্তু একেবারে যে নাই সেটা মানতে পারছি না।


●সর্বোপরি মৌলিক কাহিনী নির্ভর মুভির নির্মানের দিকে সুনজর দেয়ার জন্য অনুরোধ করব। আশা করি দিক সমূহ মাথায় রেখে জাজ তাদের পরবর্তী যৌথ প্রযোজনার মুভি নির্মান করবে।

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

সবশেষে বলব খারাপ না মুভিটি, ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট আপনি হাসির উপর থাকবেন। আমার সাথে সাথে পুরো হল ভর্তি মানুষ হেসেছে। সুতরাং বলতেই পারি মুভিটি তারা উপভোগ করেছে। রিমেক মুভি হলেও অন্তত নির্মাণ ভালো থাকার কারনে মানুষের ভালো লেগেছে। মুভিটিকে আমি শুধু মুভি হিসাবে দেখার জন্য অনুরোধ করব, সে বিচারে দেখে আমি মুভিকে ১০ এ ৬ রেটিং দিব।

“““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““

ধন্যবাদ সবাইকে এতো বড় লেখা কষ্ট করে পড়ার জন্য