আনন্দ অশ্রু(১৯৯৬):মৃত্যুঞ্জয়ী সালমান-শাবনুর জুটি

মুভি রিভিউ July 30, 2016 1,895
আনন্দ অশ্রু(১৯৯৬):মৃত্যুঞ্জয়ী সালমান-শাবনুর জুটি

দেশীয় চলচিত্র বাজারে নব্বই দশকে বাণিজ্যিক ঘরণায় তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয় এক নাম সালমান শাহ । মোহনীয় অভিনয় ক্ষমতা দিয়ে কেয়ামত থেকে কেয়ামত থেকে শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচিত্র বুকের ভেতর আগুন পর্যন্ত দর্শকের মন জয় করে নিজের শতাব্দীকে জয় করেছেন।




অকালে চলে যাওয়ার পর দেশীয় চলচিত্র বাজার যখন প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বিধুর তখন ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় শিবলি সাদিক পরিচালিত জনপ্রিয় জুটি সালমান-শাবনূরের আনন্দ অশ্রু ।




সালমান শাহ ও শাবনূর অভিনীত আনন্দ অশ্রু ছবিটি আপামর চলচিত্র বাজারে ব্যপক দর্শকপ্রিয়তা পায় । ভক্তকূলের কাছে এ ছবিটি যেন প্রিয় নায়ক হারানোর শোককে আরো বাড়িয়ে দেয় ।


আনন্দ অশ্রু চলচিত্রটির কাহিনীচিত্র আবর্তিত হয়েছে ক্ষমতার মোহ-প্রেমের দ্বন্দ্ব নিয়ে ।কাহিনীচিত্রে সালমান শাহ দেওয়ান বংশের সন্তান দেওয়ান খসরু ।পারিবারিকভাবে প্রতিপত্তি রয়েছে । ক্ষমতা ও সম্পত্তির মোহে দেওয়ান বংশের ছোট ছেলে দেওয়ান খসরুর ছোট চাচা দেওয়ান বাড়ীর কাজের লোকের মেয়ে দোলা ও দেওয়ান খসরুর প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ও নিজের পথ থেকে সরাতে দেওয়ান খসরুকে ইনজেকশন দিয়ে পাগল করে ফেলে ।এদিকে দেওয়ান খসরুর ছোট বেলার বন্ধু ভাবনা খসরুকে মনে মনে চায় ও ছবির শেষ ভাগের করুন পরিণতি যেন চিরন্তন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।




চলচিত্রটিতে দেওয়ান খসরূ চরিত্রে সালমান শাহের প্রাণবন্ত অভিনয় তার অভিনয় ক্ষমতা ও বিচক্ষণতার প্রতিরূপ হিসেবে সমালোচক মহলের সুনজর আকৃষ্ট করতে বাধ্য । বরাবরের মতই পোষাক নির্বাচনে ব্যাতিক্রমী সালমান শাহ তার পছন্দের ওজন বুঝিয়েছেন ।পুরো চলচিত্রে দেওয়ান খসরু চরিত্রে সালমান শাহ নিজেকে পরিপূর্ণ গীতিকারের চরিত্রায়ণে সফল হয়েছেন । চরিত্রে ব্যবহৃত মাথার রঙ্গিন গোল টুপি চরিত্রে বৈচিত্রতা এনেছে । এছাড়াও ব্যবহৃত হ্যাট-সানগ্লাস সর্বোপরি সালমান শাহের ভঙ্গি ছিল নজরকাড়া।




দোলা চরিত্রে শাবনূর ছিল সমান্তরাল প্রাণবন্ত । কাহিনীচিত্রে স্কুল পড়ুয়া চঞ্চল গ্রামের সাধারণ মেয়ের জীবনে ঘটনাচক্রে চলে আসে চিরন্তন প্রেমের আবেগ । ধনী পরিবারের সন্তান দেওয়ান খসরুর সাথে প্রেম হয়ে যায় দোলার ।কিন্তু দাম্ভিকতা ও কূটচালে দুজনের বিচ্ছেদের হাহাকার আজো দর্শককে কাঁদাবে। গল্পের মধ্যভাগের পরে সেবিকা হিসেবে দোলার আত্মপ্রকাশের লড়াই ও শেষদিকে কঠিন বাস্তবতা যেন নিষ্ঠুর প্রেমহীন পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি।




শাবনূরের মায়াবী চেহারা ও অভিনয়ের সাবলীলতা আজো চলচিত্রমহলে তার প্রশংশিত অবস্থান ধরে রেখেছে ।




এছাড়াও চলচিত্রটিতে মূল খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন কালজয়ী শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী । কাহিনীচিত্রে দেওয়ান বংশের ছোট কর্তা হিসেবে সম্পত্তি ও ক্ষমতার মোহে অন্ধ এক চরিত্রের কাঠামোকে হুমায়ূন ফরিদী তার অসাধারণ গুন দিয়ে জয় করেছেন । নিজের পাপকে ঢাকতে খুন ও প্রতিপত্তির মোহে প্রতিদ্বন্দ্বীকে পাগল করে দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া তার মূল কাজ । এ যেন এক চিরন্তন মনস্তত্বের বহিঃরূপ।




এছাড়াও কাঞ্চি ‘ভাবনা’ চরিত্রের উপস্থিতি ত্রিভুজ প্রেমের সংকট হিসেবে কাহিনীচিত্রের গভীরতা বাড়িয়েছে।চলচিত্রের পর্দা এক জীবন্ত আখ্যানে রূপ নিয়েছে ।




চলচিত্রের একটি গুরুত্বপুর্ন পার্শ্ব চরিত্রে দিলদারের অভিনয় ছিল অসাধারন দেওয়ান খসরুরূপী সালমান শাহের সহকারী হিসেবে অভিনয়ে সাবলীল কৌতুকরস দিয়ে ঘটনাপ্রবাহে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন।




এছাড়া ডলি জহুর, খালেদা আক্তার কল্পনা, সিরাজুল ইসলাম,সাদেক বাচ্চু, সিরাজ হায়দার, নানা শাহ, শারমিন ও আখি অভিনয় করেন ।






আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঙ্গীত আয়োজনে চলচিত্রে ব্যবহৃত গানে কন্ঠ দিয়েছেন সুবীর নন্দী, এন্ড্রু কিশোর,কনক চাপা,শাকিলা জাফর,আগুন,সালমা জাহান,দিলরুবা খানম।




কনক চাপার কণ্ঠে ‘তুমি আমার এমনি একজন,যারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন’ যেন প্রেমের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষার অস্তিত্বের জানান দেয় ।


এছাড়াও সালমা জাহান-এন্ড্রু কিশোরের কন্ঠে ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ে সুখের দোলা’ যেন অনবদ্য এক কালজয়ী হৃদয়ের অনুভব।


‘থাকত যদি প্রেমের আদালত’ সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠে যেন প্রেমের সাম্যতার অধিকারের কন্ঠ ।এছাড়াও অন্যান্য গান গুলোও হৃদয় ছুয়ে যায় কথা ও সুরের মূর্ছনায় ।




সর্বোপরি, সালমান শাহ পরবর্তী যুগেও চলচিত্র অস্তিত্বে সালমান এখনো চির তরুণ প্রজন্মের নায়ক ।গত প্রায় দুই দশক আগে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচিত্র গুলোর আবেদন এখনো কমে নি। বরং , নতুন প্রজন্মের কাছে সালমান শাহ একটি আইকনের নাম ।






চলচিত্রঃ আনন্দ অশ্রু(১৯৯৭)


IMDB: ৮.১/১০


আমার রেটিংঃ৮.৭/১০