মুভি রিভিউঃ কেলোর কীর্তি বা গরিবের নো এন্ট্রি

মুভি রিভিউ July 30, 2016 3,452
মুভি রিভিউঃ কেলোর কীর্তি বা গরিবের নো এন্ট্রি

২০০৫ এর কথা। বলিউডে তখন কমেডি জনরে খুব জনপ্রিয়। সেসময় নো এন্ট্রি নামে আনিজ বাজমির মাল্টি স্টারার ছবিটি ব্যাপক ব্যাবসা সফল হয়। ছবিতে প্রধান চরিত্রে ছিলেন অনিল কাপুর, ফারদীন খান, লারা দত্তা, সেলিনা জেটলি, এশা দেওল এবং বিপাশা বসূ। একটি বিশেষ চরিত্রে ছিলেন সালমান খান। বিপাশা বসূর করা চরিত্রটি সমালোচকদের প্রশংসাও পায়।


সেই নো এন্ট্রিকেই রিমেক করে পশ্চিম বাংলায় তৈরী হয়েছে ” কেলোর কীর্তি ” । অনিল কাপুরের চরিত্রে যীশু সেন, ফারদিন খানের চরিত্রে অঙ্কুশ, সালমান খানের চরিত্রে দেভ এবং বিপাশা বসূর চরিত্রে নূসরাত জাহান অভিনয় করছেন এ ছবিতে। সাথে আছেন সায়ন্তীকা বেনার্জী, মিমি চক্রবর্তী, কৌশানী মুখার্জী।




ছবিটি সম্প্রতি বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে এবং এ নিয়ে অনলাইন মিডিয়া তো বটেই, খোদ এফডিসিতেই সমালোচনার ঝড় বইছে।


সবাই ধারনা করছে এ ধরনের ভারতীয় ছবি মুক্তি আমাদের দেশীয় ছবির ব্যাবসাকে হুমকির মুখে ফেলবে।


কেলোর কীর্তি দেশীয় ছবিকে কতটা হুমকির মুখে ফেলতে সামর্থ্য রাখে তা নিয়ে বলার আগে ছবিটি সম্পর্কে বিস্তারিত সমালোচনা করার আছে …


ছবির গল্প আনিজ বাজমীর লেখা নো এন্ট্রিরই হুবহু বাংলা ভার্সন।কমেডি ছবি হিসেবে গল্পটা খারাপ না। তবে সমস্যা হচ্ছে চিত্রনাট্য। চিত্রনাট্যও অনেকটাই হুবহু রাখা হয়েছে। কিন্তু দুটো মুভির ব্যাপক বাজেট পার্থক্য থাকায় কেলোর কীর্তির চিত্রনাট্য হয়ে উঠেছে নো এন্ট্রির গরিবি ভার্সন। নো এন্ট্রির চিত্রনাট্য যে ঝমকালো পরিবেশ দাবী করে কেলোর কীর্তি তার সিকি ভাগও নিয়ে আসতে পারেনি।


ঝমকালো চিত্রনাট্য পর্যাপ্ত বাজেট না পাওয়ায় পুরো প্রোডাকশন ভ্যালুই অত্যন্ত সস্তা বা নিম্ন মানের হয়ে গেছে।


ছবির টেকনিক্যাল দিক বিবেচনায় কোন কিছুই ভালো হয়নি। সিনেমাটোগ্রাফী কিংবা এডিটিং খুবই গড়পড়তা মানের। গুরুপ্তপূর্ন কিছু ভিএফএক্স এর কাজ ছিলো যা একেবারেই নিম্ন মানের হয়ে ধরা দিয়েছে।


ছবির গানগুলো চরম বিরক্তিকর। বাংলাদেশের যে কোন ছবির গান কথা ও সূরে এর চেয়ে অনেক ভালো ।


ডায়লগ নো এন্ট্রি থেকে নেয়ায় কিছুটা সহনীয় ছিলো। তাও কমেডি ছবি হিসেবে আরো অনেক ভালো হতে পারতো।




তবে ছবির ভালো দিক বলতে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়। যীশু সেন ছবির প্রান। সে একাই পুরো ছবি নিজের করে নিয়েছে। অঙ্কুশও ভালো করেছে। বিশেষ চরিত্রে দেভও ভালো। নায়িকাদের মধ্যে বাকিরা ভালো করলেও বিপাশা বসূর চরিত্রে নূসরাত জাহান একেবারেই ফেইল করেছে। নো এন্ট্রিতে বিপাশার পারফর্মেন্স সবচেয়ে বেশী প্রশংসিত ছিলো। সে হিসেবে নূসরাত চরিত্রটিকে ডুবিয়েছে।




এবার আসি বাংলাদেশে ছবিটি মুক্তি প্রসঙ্গে …


এ ছবিটি কোন অবস্থাতেই বাংলা কোন ছবির চেয়ে মানের দিক বিবেচনায় খুব বেশী উপরে অবস্থা করে না। এ ধরনের নিম্ন মানের ছবি নিশ্চয়ই দর্শক দেখবে না কেননা বাংলাদেশে আর যা কিছুর অভাব থাকুক না কেন নিম্ন মানের ছবির কোন অভাব নেই।


এ ছবির একমাত্র ভালো দিক হচ্ছে অভিনেতাদের পার্ফরমেন্স। আমাদের দেশেও ভালো অভিনেতার অভাব নেই। পরিচালকরা এ ছবি থেকে এটুকু শিখতে পারে যে কিভাবে সিনিয়র, জুনিয়র তারকা শিল্পীদের একত্রে ব্যাবহার করে ভালো অভিনয় সমৃদ্ধ ছবি বানানো যায়।




যমুনার ব্লকবাষ্টারে সিনেমাস্‌- এ প্রথম দিনে ছবিটির দর্শক উপস্থিতি ছিলো ৪০-৫০% । এর চেয়ে বেশী দর্শক ফ্লপ বাংলাদেশী ছবিগুলোতে এমনকি সপ্তাহের শেষ দিনেও থাকে। ছবিটি ঘিরে দর্শক আগ্রহ্‌ খুব একটা নেই তা বলাই বাহুল্য।


সূতারং এ ধরনের নিম্ন মানের ছবির সাথে প্রতিযোগীতা করতে ভয় না পেয়ে নিজেদের ছবির মান উন্নয়নে চেষ্টা করা উচিত সবার।


প্রতিযোগীতাকে ভয় পায় দুর্বলেরা। আমরা আমাদের বাংলা সিনেমা কে দুর্বল হিসেবে দেখতে চাইনা।