মুভি রিভিউ – ছুঁয়ে দিলে মন

মুভি রিভিউ July 29, 2016 1,289
মুভি রিভিউ – ছুঁয়ে দিলে মন

ছবিটি মুক্তি পায় গত বছরের ১০ এপ্রিল। দুই দিন হলে গিয়ে দেখতে যেয়ে দুর্ভাগ্যবশত টিকিট না পেয়ে পরে আর দেখা হয়ে ওঠেনি। আমার মত যারা ছবিটি দেখতে পাননি তাদের জন্য সুখবর। ডিভিডি আকারে ছবিটি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও ইউটিউব এবং টরেন্টেও মানসম্মত প্রিন্ট পাবেন ছবিটির।




এবার আসি রিভিউয়ে। কাহিনী শুরু হয় আবির এবং নীলার কৈশোরের প্রেম থেকে। শহরের প্রভাবশালী ব্যক্তি আফজাল খান যে কিনা নিলার বাবা কোন ভাবে আবির- নীলার প্রেমের ব্যাপারে জেনে যায়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের আফজাল খানের বংশে বিয়ের আগে প্রেম-ভালবাসার ব্যাপারগুলো গ্রহণযোগ্যতা পায় না। আর তাই আবির আর আবিরের পরিবারের উপর ক্ষণে ক্ষণে প্রতিশোধ নেয় আফজাল খান শহরের মাস্তান ছেলেদের দিয়ে আবিরের মাথার চুল কেটে দিয়ে, আবিরের বোনকে উত্তক্ত করে, আবিরের বাবার গায়ে ময়লা ফেলে, বাড়ির চালে ঢিল ছুঁড়ে। এসব থেকে নিস্তার পেতে আবিরের পরিবার হৃদয়পুর শহর ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে। ভাগ্যের টানে আবির তরুণ বয়সে আবার হাজির হয় হৃদয়পুরে, দেখা হয় নীলার সাথে। নতুন করে শুরু হয় তাদের প্রেম। কিন্তু প্রেম কি আসলেই ছিল আবিরের মনে? নাকি সব ছিল তার সাজানো নাটক শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। তাদের প্রেম কি শেষ পর্যন্ত পরিপূর্ণতা পায়? এ সব কিছু জানা যাবে ছবিটি দেখার পর।




পরিচালক শিহাব শাহিন পূর্বে বহু অসাধারণ নাটক নির্মাণ করলেও ছুঁয়ে দিলে মন তার প্রথম চলচ্চিত্র। নাটকের পরিচালকেরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করলে তারা মূলত শিল্পগুণ সম্পন্ন ছবি নির্মাণ করেন। বাণিজ্যিক ধারার ছবি নির্মাণে তাদের খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না। সেই দিক থেকে পরিচালক ভিন্ন পথে হেঁটেছেন। সেই জন্য উনি অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। সুন্দর চিত্রায়ন, অসাধারণ লোকেশন নির্বাচন, রুচিশীল পোশাক ডিজাইন সব কিছুই ছিল চোখে পড়ার মত। আর গানের কথা আলাদা করে না বললেই নয়। সাজিদ সরকার এবং হাবিব ওয়াহিদের সংগীতায়জনে তাহসান,শাকিলা,নিরঝো,হাবিব,শাওন চমৎকার গান উপহার দিয়েছে তাদের কণ্ঠে। এখনকার বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে আইটেম গান না হলেই নয়। কিন্তু এতগুলো শ্রুতিমধুর গানের পর আইটেম গানের অভাব একদমই মনে হয়নি।




ছবির কাহিনী সাদামাটা গতানুগতিক ধারার হলেও একদম বিরক্তিকর লাগেনি। প্রতিটি দৃশ্যই দেখে মনে হচ্ছিল নতুন কিছু দেখছি। তবে ছবিতে কিছু অসংগতিও লক্ষ্য করা গেছে। যেমন আবির যখন হৃদয়পুর কলেজে ভালবাসা দাও গানটি করে যেটা নীলাকে ছোটবেলা শুনিয়েছিল সেটা শুনে নীলা রিকশা থামিয়ে কলেজের দিকে রওনা দেয়। এখানের দৃশ্যে নীলার ব্যাগ দেখা যায় কিন্তু কয়েক মুহূর্তের ভেতর ব্যাগটি হাওয়া হয়ে যায়। আবার ছবির টাইটেল ট্র্যাক শুরু হওয়ার আগে নীলার কথোপকথন হয় তার চাচাত ভাই ডানির সাথে যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। ডানির সাথে কথোপকথন শেষ হতেই আবীরের সাথে দেখা, তাকে নিয়ে ভাবা এই সব দৃশ্য না দেখিয়ে সরাসরি গান শুরু হওয়াটা একটু দৃষ্টিকটু লেগেছে। আবার শেষের দৃশ্যে পানিতে ভিজে যাওয়া আবীর নীলার পোশাক অল্প সময়ের ব্যবধানে কিভাবে শুকিয়ে গেল সেটাও একটা বিষয়।




অভিনয়ের কথা যদি বলা হয় তবে সবাইকে এ প্লাস দেওয়া যায় সহজেই। বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে সাধারণত মূল চরিত্রগুলোর অভিনয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয় কিন্তু এই ছবিতে প্রতিটি চরিত্রের অভিনয় সাবলীল। এমনকি ছোট ছোট চরিত্র গুলোও ফুটিয়ে তুলতে সার্থক হয়েছে অভিনেতারা। মম এবং আরফিন শুভ অসাধারণ অভিনয় করেছে। কিন্তু তাদেরকে ছাপিয়ে গেছে খল চরিত্রে অভিনয় করা ইরেশ জাকের। তার মজার চুলের ছাঁট আর বোকা বোকা ভাব করে থাকা লুক বেশ উপভোগ্য ছিল। এছাড়াও বাংলা ছবিতে সবসময় খল চরিত্রে অভিনয় করা মিশা সওদাগর আবিরের দুলাভাই চরিত্রে অভিনয় করেছেন যেটা অন্যরকম ব্যাপার ছিল। তার হাস্যরসাত্মক অভিনয় দর্শককে হাসাবেই। নীলার বাবার চরিত্রে অভিনয় করা আলি রাজের অভিনয়ও ছিল ভালো।




IDMb রেটিং-এ ১০-এ ৮ পাওয়া ছবিটির বাজেট ছিল ৬০ লাখ টাকা। আর ছবিটি থেকে বক্স অফিস সংগ্রহ করে ৩ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। গত বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশে মুক্তি পেলেও মে মাসে এটি আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে মুক্তি দেওয়া হয়। এ বছর আবার কোলকাতাতেও মুক্তি দেওয়া হয় ছবিটি।