The Green Mile: এক অন্যরকম অনুভূতির গল্প

মুভি রিভিউ July 28, 2016 3,614
The Green Mile: এক অন্যরকম অনুভূতির গল্প

আজ প্রায় অনেক দিন পর লিখতে বসলাম। গত কয়েকটা মাস ধরে কোন মুভি দেখবো আর কোনটা দেখবো না সেটা নিয়ে আমাকে বেশ কাঠ খোঁড় পোহাতে হচ্ছিল। আজ প্রায় ৮ বছর ধরে মুভি দেখছি। গত ৮ বছরে এমন কোন রাত হয়তো বাদ পরে নি যে রাতে আমার মুভি দেখা হয় নি। গত কয়েক মাস ধরে মনে হচ্ছিল হয়তো সব ভালো ভালো মুভিই আমি দেখে ফেলেছি। হয়তো আর দেখার মতো তেমন কিছু বাকি নেই। আমি বরাবরই আমার বন্ধুদের কাছ থেকে মুভির সাজেশন নিয়ে থাকি। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে তারাও কেউ আমাকে তেমন কোন মুভি সাজেশট করতে পারছিল না। অগত্যা আমার ল্যাপটপের কোণায় পরে থাকা কিছু কিছু মুভি খুঁজে খুঁজে বের করে দেখতে শুরু করলাম। আর ঠিক তখনই বুঝতে পারলাম যে না, আমার মুভির ভাণ্ডার এখনো ফুরিয়ে যায় নি। The Green Mile এর মতো একটি মুভিকে আমি প্রচণ্ড অবহেলার সহিত ফেলে রেখেছি।




পুরোটা মুভি দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে এই মুভিটি হচ্ছে বিভিন্ন অনুভূতির গল্প। এমন সব কিছু অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মুভিটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে একজন Former Prison Officer, Paul Edgecomb কে নিয়ে যে কিনা Death Row এবং সেই সাথে State এর Electric Chair এর দায়িত্বে ছিল। তার দায়িত্ব ছিল Cold Mountain Penitentiary এর সবকিছু Supervise করা এবং সেই সাথে তার অধীনে থাকা চার জন অফিসারকে তদারকি করা। এখানে উল্লেখ্য যে Cold Mountain Penitentiary হচ্ছে একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার স্থান যেটাকে সাধারণত জেলখানা থেকে কিছুটা পৃথক করে রাখা হয় কারণ এখানে সেসব আসামীদের রাখা হয় যারা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী। কিছুটা বিশেষ পর্যবেক্ষণ এবং মৃত্যুর আগের সময়টাতে তাদের মানসিক অবস্থার কিছুটা যাতে উন্নতি হয় মোটকথা মৃত্যুর আগের সময়টাতে তারা যাতে কিছুটা হলেও ভালো মানুষ হিসেবে কিছুদিন জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য তাদের জন্য এই আলাদা ব্যবস্থা করা হয়। Paul এবং তার সহকর্মীরা সবাই নিজেদের মধ্যে তাদের এই কর্মস্থলকে Green Mile বলে সম্বোধন করে কারণ তারা সবাই মনে করে এখান থেকে অন্তত জীবনের শেষ সময়ে এসে এই মানুষগুলো কিছুদিনের জন্যে হলেও সত্যিকার মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারে। Paul এর বাকি তিনজন সহকর্মী বেশ ভালো হলেও Percy Wetmore নামে একজন সহকর্মীর আচরণগত কিছু সমস্যা এবং অন্যান্য বেশ কিছু কারণ থাকায় তার প্রতি সবারই কিছুটা ক্ষোভ ছিল। যাই হোক Paul এর শারীরিক কিছুটা সমস্যা থাকায় এতো বড় একটি স্পর্শকাতর দায়িত্ব পালন করাটা তার জন্য মানসিকভাবে কিছুটা চাপ সৃষ্টি করছিল। তারপরও সে এবং তার সহকর্মীরা বেশ ভালোভাবেই তাদের সব দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিল।




মুভিটির কাহিনীর মোড় ঘুরে যায় যখন John Coffey নামে বিশাল দেহের কৃষ্ণাঙ্গ এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী তাদের Penitentiary এর মধ্যে আসে। তাকে দেখে সবাই মোটামুটি কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তার মধ্যে পরে যায় কারণ অন্যান্য আসামীদের মতো মৃত্যুর আগে সে যদি কখনো Violent হয়ে যায় তাহলে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এই পাঁচজনের বেশ বেগ পেতে হবে। কিন্তু কিছুদিন পর Paul যেটা বুঝতে পারে সেটা হচ্ছে এই বিশাল দেহের মানুষটি নিতান্ত অসহায় একটি মানুষ এবং অন্যান্য সব আসামীদের তুলনায় তার আচার আচরণ এবং বাকি সব কিছু বেশ ভালো এবং স্বাভাবিক। স্বভাববশতই কৌতূহলের বশে Paul তার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে এবং জানতে পারে ভয়াবহ এক তথ্য। John নামের বিশাল এই ব্যাক্তিটি দুজন শ্বেতাঙ্গ মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করার অভিযোগে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এরপর সবকিছু বেশ স্বাভাবিকই চলছিল। এরি মধ্যে হঠাৎ একদিন Penitentiary এর মধ্যে দুর্ঘটনাবশত Paul এর শরীরে প্রচণ্ড আঘাত লাগে। আর ঠিক তখন John Coffey অত্যন্ত অদ্ভুত উপায়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে Paul কে সুস্থ করে তুলে। আর তখনই Paul আবিষ্কার করে যে John Coffey মোটেই সাধারণ কোন মানুষ তো নয়ই বরং তার আছে বেশ কিছু Supernatural ক্ষমতা। তারপর থেকে সবকিছু বদলে যেতে শুরু করে। এর পাশাপাশি Paul এর সহকর্মী Percy ভয়ংকর সব কার্যকলাপ করা শুরু করে যার কারণে Penitentiary এর কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে। আর এর মধ্যে ঘটতে থাকে বেশ কিছু ঘটনা।




ছবিটিতে Paul Edgecomb এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন যাকে সত্যিকার অর্থে আসলে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোন দরকারই নেই তিনি হচ্ছেন Tom Hanks. এক কথায় একটি চরিত্রের গভীরতা ঠিক কতোটুকু হতে পারে তা তিনি এই মুভিতে তার অসাধারণ অভিনয় প্রতিভার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। ছবিটির বাদ বাকি চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন যথাক্রমে David Morse, Bonnie Hunt, Michael Clarke Duncan, James Cromwell, Michael Jeter, Graham Greene, Doug Hutchison এবং অন্যান্য আরো অনেকে। এর মধ্যে John Coffey চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত Michael Clarke Duncan যিনি কিনা সে বছর এই চরিত্রটির জন্য Best Supporting Actor ক্যাটাগরিতে Oscar মনোনয়ন পান। মূলত তার এই চরিত্রটিকে কেন্দ্র করেই পুরো মুভির কাহিনী এগিয়েছে।




পাশাপাশি Paul এর সহকর্মীদের চরিত্রে অভিনয় করা Brent Briscoe, Barry Pepper এবং Jeffrey DeMunn এর অভিনয়ও আমার কাছে যথেষ্ট ভালো লেগেছে। এর মধ্যে Barry Pepper এর অভিনয় আমার কাছে সবচাইতে ভালো লেগেছে। মুভিটিতে তার চরিত্র ছিল কম বয়েসি একজন প্রিসন গার্ডের। বিশেষ করে মুভিটির শেষ মুহূর্তের বেশ কিছু ইমোশনাল সিনে তার অভিনয় চোখে পরার মতো।




ছবিটির বিশেষ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমেরিকান অভিনেতা Doug Hutchison. তিনি মুভির Percy Wetmore চরিত্রটি চিত্রায়ন করেছেন। একটি চরিত্রকে কিভাবে এতোটা জঘন্য ভাবে উপস্থাপন করা যায় তা এই Doug Hutchison এর অভিনয় না দেখলে বুঝা যাবে না। তিনি এর আগে The X-Files টিভি সিরিজেও অত্যন্ত Disturbing একটি ক্যারেক্টার চিত্রায়িত করে বেশ প্রশংসা পেয়েছিলেন। মূলত Doug Hutchison তার Disturbing এবং Antagonistic Characters গুলোর জন্যই এখনো হলিউডে বেশ প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন। মানুষকে অভিনয়ের মাধ্যমে হাসানো কিংবা কাঁদানো অনেক কঠিন কাজ হলেও পুরোটা মুভি জুড়ে কোন চরিত্রের প্রতি ঘৃণা বজায় রাখা যেমন তেমন কোন ব্যাপার নয়। আর এই কাজটিই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মুভিতে চিত্রায়িত করেছেন তিনি।




মুভিটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন The Shawshank Redemption ক্ষ্যাত পরিচালক Frank Darabont. পরিচালকের নাম শুনেই বুঝতে পারছেন মুভিটিতে কাহিনী এবং চিত্রনাট্যের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। Frank Darabont মূলত হলিউডে একজন চিত্রনাট্যকার এবং লেখক হিসেবে পরিচিত। তিনি বেশ কিছু ব্যবসাসফল মুভির চিত্রনাট্য এবং কাহিনী লিখার দায়িত্বে ছিলেন যেমন Saving Private Ryan, King Kong, Godzilla, The Fan এবং সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া Huntsman: Winter’s War. ব্যাক্তিগত জীবনে তার লিখালিখি স্বভাবের উপর একজন বেশ স্বনামধন্য লেখকের বেশ খানিকটা প্রভাব রয়েছে যার কারণে হাতে গোণা মাত্র যে ছয়টি ছবি তিনি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তার মধ্যে তিনটি ছবিরই কাহিনী ছিল সেই লেখকের বিখ্যাত সব বেস্ট সেলার উপন্যাস থেকে নেয়া। আর সেই লেখকটি হচ্ছেন বিখ্যাত হরর উপন্যাসিক Stephen King.




মূলত Fantasy Crime Drama জনরার এই মুভিটি Stephen King এর বেস্ট সেলিং নোভেল The Green Mile এর কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। কাহিনীর পাশাপাশি মুভিটির চিত্রনাট্য লিখার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। মুভিটির কাহিনী ফ্লাশব্যাক ফরম্যাটে এগিয়েছে। আমি আগেই বলেছি এবং আবারো বলছি মুভিটির চিত্রনাট্য এতোটাই অসাধারণ যে মুভিটি একবার দেখতে বসলে অন্তত না শেষ করে কেউ আর উঠতে পারবেন না। মুভিটির Cinematography এর দায়িত্বে ছিলেন David Tattersall. মুভিটির প্লট এবং ব্যাকগ্রাউন্ড এর ব্যাপ্তি বেশিরভাগ সিনে অনেক কম ছিল। কিন্তু এমন স্বল্প পরিসরে তিনি যে কতোটা নিখুঁত আর অসাধারণ আলো ছায়ার খেলা দেখাতে পেরেছেন তা এই মুভিটি না দেখলে বুঝা যাবে না। বিশেষ করে ইমোশনাল সিনগুলোতে শুধুমাত্র এই Cinematography এর মাধ্যমে তিনি দৃশ্যগুলোকে আরো জীবন্ত করে তুলেছেন।


এখন আসি আসল কথায়। মুভিটির সবচাইতে আমার যে জিনিসটি ভালো লেগেছে তা হচ্ছে মুভিটির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। আর মুভিটির মিউজিকের দায়িত্বে ছিলেন Thomas Newman যাকে আসলে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার দরকার আমি আর মনে করি না। তার করা কিছু অসাধারণ মুভির স্কোরগুলো হচ্ছে Skyfall, Road to Perdition, The Adjustment Bureau, Brothers, Bridge of Spies এবং অবশই The Green Mile. শুধুমাত্র এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের কারণে মুভিটিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। কিছু কিছু মিউজিক আছে যেগুলো শুনলে বুকের মধ্যে কেমন যেন শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তেমনি কিছু অসাধারণ কাজ করা হয়েছে এই মুভিটিতে।




ছবিটি পরিচালনার পাশাপাশি David Valdes এর সাথে প্রযোজনাও করেছেন Frank Darabont. Warner Brother’s এর ব্যানারে নির্মিত ছবিটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মুক্তির পর ছবিটি বোদ্ধা মহলে যথেষ্ট প্রশংসিত হয় এবং সেই সাথে বিশ্বব্যাপী উপার্জন করে নেয় প্রায় ২৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরবর্তীতে মুভিটি চারটি ক্যাটাগরিতে Academy Awards বা Oscar এর জন্য মনোনয়ন পায়। ক্যাটাগরিগুলো ছিল Best Supporting Actor for Michael Clarke Duncan, Best Picture, Best Sound, and Best Adapted Screenplay. ছবিটি মুক্তি দেয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালের ১০ই ডিসেম্বর।




এই মুভিটি শুধুমাত্র অনুভূতির গল্প, এমন সব কিছু অনুভূতি যা আমরা বুঝতে পারি, অনুভব করতে পারি কিন্তু কখনো প্রকাশ করতে পারি না। মুভিটি দেখার সময় আমি কখনো হেসেছি, কখনো খুব মন খারাপ করেছি আর কখনো বা এমন কিছু অনুভূতি অনুভব করেছি যা আমার এই লিখার মাধ্যমে কাগজে আনা সম্ভব নয়।


লিখাটি শেষ করছি আমার এই মুভির সবচেয়ে ফেভারিট দুইটা ডায়লগ দিয়ে। আশা করি মুভিটি দেখতে বসে কেউ অন্তত নিরাশ হবেন না।


“I’m tired, boss. Tired of bein’ on the road, lonely as a sparrow in the rain. Tired of not ever having me a buddy to be with, or tell me where we’s coming from or going to, or why. Mostly I’m tired of people being ugly to each other. I’m tired of all the pain I feel and hear in the world everyday.”


“He killed them with their love. That’s how it is everyday; All over the world.”