ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রাজ্য থেকে!

দেখা হয় নাই July 23, 2016 1,207
ঘুরে আসুন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রাজ্য থেকে!

ভূমধ্যসাগরের বুকে বহাল তবিয়তে থাকা তাভোলারা দ্বীপটির সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে বেশ কয়েকবার রাজনীতির মাঠ গরম হয়েছিল। আর রাজনীতির সেই প্যাচ থেকে বের হওয়ার জন্য তাভোলারাকেও কিছু মিত্র তৈরি করতে হয়েছিল।


ইতালির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন ছিলেন গিলিপ্সি গারিবাল্ডি, তিনিই প্রথম তাভোলারার রাজপরিবারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ১৯০৩ সালে মাত্র ৩৩জন আদিবাসীর এই দেশটির সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য হন সারদিনিয়ার তৎকালীন রাজা ভিট্টোরিও ইম্মানুয়েল।


চর্তুপাশে সাগর নিয়ে সারদিনিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর বিখ্যাত উপকূল সামেরালদা। পাহাড়ি দ্বীপটিতে নেই কোনো রাস্তা-ঘাট, এমনকি পর্যটকদের জন্য কোনো হোটেল পর্যন্ত নেই। তবে বসবাসের যে একেবারেই কোনো বন্দোবস্ত নেই তাও কিন্তু নয়। দ্বীপের বেলাভূমিতে থাকা স্বচ্ছ সাদা বালুই হলো পর্যটকদের আরামের বিছানা।


বলা যায়, স্বল্প সংখ্যক জনগোষ্ঠির এই দ্বীপটির একছত্র অধিপতি হিসেবে গত ২২ বছর ধরে টনিনো নামের হোটেল মালিক বেশ দাপটের সঙ্গেই আছেন। তার এই পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকার রাজত্ব নিয়ে তিনি বেশ আনন্দেই থাকেন।


সম্প্রতি তাভোলারা রাজ্য তার ১৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করলো, যদিও কাগজে কলমে মাত্র ২৫ বছর আগে ইতালির দখল থেকে দ্বীপটি বের হতে পেরেছে। হয়তো মনে হতে পারে হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ নিয়ে ইতালি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কি দরকার ছিল।


কিন্তু ঘটনার শুরু সেই ১৮০৭ সালে, যখন টনিনোর পরদাদা গিলিপ্সি বারতোলিওনি এই দ্বীপের প্রথম অধিবাসী হলেন।


তাভোলারা রাজ্যের যে নথিপত্র সংরক্ষিত আছে তাতে পরদাদা গিলিপ্সিকে অর্ধেক মেষপালক এবং অর্ধেক জলদস্যু হিসেবে দেখানো হয়েছে।


গিলিপ্সি একদিন অনুধাবন করতে পারলেন এই দ্বীপে একধরণের বিরল ছাগল দেখা যায় যাদের দাতগুলো অনেকটাই স্বর্ণাভ। সমুদ্র তীরবর্তী শৈবাল খাওয়ার কারণেই ছাগলগুলোর দাতের রং পরিবর্তন হয়ে গেলেও সারদিনিয়ার শাসক কার্লে অ্যালবার্তোর কাছে খবর গেল যে এই দ্বীপে বিরল প্রজাতির ছাগল দেখা গেছে। এই সংবাদ পাবার পর শাসক অ্যালবার্তো তাভোলারা গেলেন শিকার করতে ১৮৩৬ সালে।


আর সেই শিকারে অ্যালবার্তোকে সহায়তা করেছিলেন গিলিপ্সির ২৪ বছরের ছেলে পাওলো। ‘যখন কার্লো অ্যালবার্তো দ্বীপে নামলেন তখন তিনি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বললেন, আমি সারদিনিয়ার রাজা কার্লো অ্যালবার্তো।


তখন আমার পরদাদা উত্তরে বলেছিলেন, বেশ, আমি তাভোলারার রাজা পাওলো।’


অ্যালবার্তো পাওলোর সহচর্যে দ্বীপে তিনদিন কাটালেন। ওই সময় সেই বিরল ছাগল শিকার করে তার মাংসে ভোজন করে বেশ তৃপ্ত হয়েছিলেন অ্যালবার্তো। তৃপ্ত অ্যালবার্তো একসময় পাওলোকে বললেন, 'পাওলো, তুমি সত্যিই তাভোলারার রাজা'। টনিনোর মতে, অ্যালবার্তো দ্বীপ ছেড়ে যাবার আগে এটা নিশ্চিত করে গিয়েছিলেন যে তাভোলারা সরকারিভাবে কখনোই সারদিনিয়ার অংশ নয়।


অ্যালবার্তো নাকি নিজের দেশে ফিরে গিয়ে পাওলোকে রাজাজ্ঞানে চিঠি লিখেছিলেন। ওই ঘটনার পরপরই পাওলো তার নিজের বাসস্থানের দেয়ালটি রং করেন এবং সেখানে রাজপরিবারের পরিবারের ইতিহাসের আদলে নিজের পরিবারের ইতিহাসের পর্যায়ক্রম লিখতে শুরু করেন।


তিনি যখন মারা যান, তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তার কবরের উপর একটি মুকুট দেয়া হয়েছিল। যদিও জীবিত থাকাকালীন সময়ে তিনি কখনো ওই মুকুট পরিধান করেননি।


ব্রিটিশ রাজপরিবারের রাজপ্রাসাদ বাকিংহ্যাম প্যালেসে এখনও একটি আলোকচিত্র দেয়ালে টানানো আছে। সেই ছবির ক্যাপশনে লেখা আছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র রাজ্য।


আর নিঃসন্দেহে সেই রাজ্যটি হলো তাভোলারা। কিন্তু সবসময়ই যে তাভোলারা পরামর্শক দিয়ে জিতে গিয়েছিল তা নয়। ১৯৬২ সালে বহুজাতিক সশস্ত্র সংস্থা ন্যাটো তাভোলারাতে ঘাটি বানালে রাজ্যের সার্বভৌমত্ব প্রথমবারের মতো খর্ব হয় এবং এককথায় স্বাধীনতাই চলে যায়।


ন্যাটো দ্বীপটিকে এমনভাবে ব্যবহার করতে শুরু করে যে কারণে দ্বীপের বাসিন্দারা গোটা দ্বীপের ক্ষুদ্র একটি অংশে চলাফেরা করতে পারতো। কিন্তু সময়ের ফেরে ন্যাটোও থাকতে পারেনি দ্বীপটিতে।


টনিনোর ভাষায়, ‘খুব সম্ভবত আমার পরিবারের বেশ সুন্দর অতীত ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমরা এখানে বেশ কঠোর পরিশ্রম করি আর সাদাসিধে জীবনযাপন করি, যেমনটা অন্যরা করেন।’


গত চল্লিশ বছর ধরে টনিনো নিজে পর্যটকদের ঘুরে দেখান চর্তুপাশ। আগে সান পাওলো বন্দর থেকে নৌকায় করে তাভোলারাতে আসতে হতো, কিন্তু বর্তমানে ফেরি চলাচলের কারণে মাত্র পঁচিশ মিনিটেই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র রাজ্যটিতে যাওয়া সম্ভব সান পাওলো থেকে।