ঘুরে আসুন সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র 'সোনাদিয়া' থেকে!

দেখা হয় নাই July 21, 2016 3,828
ঘুরে আসুন সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র 'সোনাদিয়া' থেকে!

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের দ্বীপাঞ্চলীয় জনপদ মহেশখালীর একটি দ্বীপ সোনাদিয়া। প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনের মতো এ দ্বীপটি সমুদ্রের বুকে অবস্থিত।


তবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মতো এখানে তেমন জনবসতি এখনো গড়ে ওঠেনি। এরপরও চারদিকে সাগর আর মাঝখানে চিরহরিৎ ঝাউ-কেউড়ার বনে ঘেরা সোনাদিয়া দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।


এখানে রয়েছে বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত প্যারাবন এবং দূষণ ও কোলাহলমুক্ত সৈকত। লাল কাঁকড়া, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম, দ্বীপবাসীর নিজস্ব সংস্কৃতি, হজরত মারহা আউলিয়ার মাজার ও তার আদি ইতিহাস, সাগরে জেলেদের মাছধরার দৃশ্য, সূর্যাস্তের দৃশ্য, প্যারাবন-বেষ্টিত আঁকাবাঁকা নদীপথে নৌকা ভ্রমণ ও স্পিডবোট দিয়ে মহেশখালী চ্যানেল হয়ে সাগরের মাঝপথে বঙ্গোপসাগরের দৃশ্য অবলোকন পর্যটকদের জন্য অনন্য আকর্ষণ।


সোনাদিয়ার অদূরে নিঝুম দ্বীপও চামচঠুঁটো কাদাখোঁচাদের আবাসস্থল। বিলুপ্তপ্রায় এ প্রজাতিকে রক্ষার জন্যই বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল সোনাদিয়াকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে।


উপকূলের এ দ্বীপে ১ হাজার ২১৫ প্রজাতির বৈচিত্র্যময় জীব রয়েছে। এর মধ্যে উদ্ভিদ ৫৬৭টি, শামুক ১৬২টি, কাঁকড়া ২১টি, চিংড়ি ১৯টি, লবস্টার দুটি, মাছ ২০৭টি, উভচর ১২টি, সরীসৃপ ১৯টি ও পাখির প্রজাতি রয়েছে ২০৬টি।


জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিনষ্টের কারণে এসব জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে এবং তা ক্রমে বিলুপ্ত হতে চলেছে।


এছাড়া চামচঠুঁটো কাদাখোঁচা (স্যান্ডপাইপার) পাখির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শীতকালে সোনাদিয়া দ্বীপে দেখা যায়। ৪ হাজার ৯২৮ হেক্টর জমির ওপর পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বি বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালার মধ্যে সৃষ্টিকর্তার সুনিপুণ সৃষ্টি শৈল্পিক আদলে গড়া সোনাদিয়ার অবস্থান।




সোনাদিয়ায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির পাশাপাশি শুঁটকি মহাল, চিংড়ি চাষ ছাড়াও রয়েছে প্রাকৃতিক বনায়ন ও বালুময় চরাঞ্চল। বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের ঘোষণায় বলা হয়, সোনাদিয়া দ্বীপ বাংলাদেশে পাখির ২০তম গুরুত্বপূর্ণ অভয়ারণ্য। প্রতিষ্ঠানটির মতে, চামচঠুঁটো পাখি বিলুপ্তপ্রায়। সারাবিশ্বে এ প্রজাতির মোট পাখির ১০ শতাংশ সোনাদিয়ায় রয়েছে।


স্থানীয়দের মতে, যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সরকারি বা বেসরকারি যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় এখানে গড়ে ওঠেনি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র। সংশ্লিষ্টদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন করা গেলে এ দ্বীপ পর্যটন বাণিজ্যের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি দ্বীপবাসীর বিকল্প আয়ের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। বর্তমানে এ দ্বীপের জনসংখ্যা ৮১০।




এখানকার মোট জমির পরিমাণ ২ হাজার ৯৬৫ দশমিক ৩৫ একর। এর মধ্য থেকে ১ হাজার ৪৭ দশমিক ৮৪ একর জমির ওপর সংরক্ষিত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় সরকার।


এনিয়ে ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। কিন্তু সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়নি।




এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সরকারের পরিকল্পনামতে, প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে মিলিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ইকো-রিসোর্ট গড়ে তোলা হবে। তবে এমন একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছুটা সময় তো লাগবেই। কারণ কাজ বাস্তবায়নের আগে সরকারকে অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়।