আধুনিক পান্তাবুড়ির চোর ধরার গল্প!!

মজার সবকিছু July 17, 2016 2,895
আধুনিক পান্তাবুড়ির চোর ধরার গল্প!!

এক যে ছিল পান্তাবুড়ি, সে পান্তাভাত খেতে বড্ড ভালোবাসত। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে সে ফ্রিজে ভাত রেখে দিত, সকালে পানি ঢেলে খাবে এজন্যে। কিন্তু এক চোর এসে রোজ ফ্রিজ খুলে পান্তাবুড়ির পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই বুড়ি লাঠি ভর দিয়ে পুলিশের কাছে নালিশ করতে চলল।

পান্তাবুড়ি ইলেক্ট্রিকের দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। একটা ইন্ডাকশন কয়েল তাকে দেখতে পেয়ে বলল, ‘পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’

পান্তাবুড়ি বলল, ‘চোরে আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই থানায় নালিশ করতে যাচ্ছি!’

ইন্ডাকশন কয়েল বলল, ‘ফিরে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেও, তোমার ভালো হবে।’

পান্তাবুড়ি বলল, ‘আচ্ছা।’

তারপর পান্তাবুড়ি একটা ক্র্যাশ করা স্পেসশিপের সামনে এসে পড়ল। দেখতে পেল একটা এলিয়েন একটা কাচের ঘরে আটকে আছে, বের হতে পারছে না। পান্তাবুড়ি লাঠির বাড়ি দিয়ে কাচ ভেঙ্গে ফেলল। এলিয়েন তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘পান্তাবুড়ি কোথায় যাচ্ছ?’

পান্তাবুড়ি বলল, ‘চোরে আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই থানায় নালিশ করতে যাচ্ছি।’

এলিয়েন বলল, ‘ফিরে যাবার সময় দেখা করে যেও, তোমার ভালো হবে।’

পান্তাবুড়ি বললে, ‘আচ্ছা।’

তারপর পান্তাবুড়ি পথের ধারে একটা ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান দেখতে পেল। দোকান থেকে একটা রিমোট কন্ট্রোলার বলল, ‘পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’

পান্তাবুড়ি বলল, ‘চোরে আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই থানায় নালিশ করতে যাচ্ছি।’

রিমোট বলল, ‘ফিরে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেও, তোমার ভালো হবে।’

পান্তাবুড়ি বললে ‘আচ্ছা।’

তারপর খানিক দূরে গিয়ে পান্তাবুড়ি দেখল, পথের ধারে একখানা ইলেক্ট্রিক রেজার পড়ে রয়েছে।

রেজার বলল, ‘পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’

পান্তাবুড়ি বলল, ‘চোরে আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই থানায় নালিশ করতে যাচ্ছি।’

রেজার বলল, ‘ফিরে যাবার সময় আমাকে সঙ্গে নিও। তোমার ভালো হবে।’

পান্তাবুড়ি বললে, ‘আচ্ছা।’


তারপর পান্তাবুড়ি থানায় গিয়ে দেখলে, দারোগা নেই। কাজেই সে আর নালিশ করতে পেল না। কনসটেবল তাকে বললো একটা জিডি করে যান। তবে লাখ খানেক টাকা ঘুষ দিতে পারলে চোর ধরা তো ধরা, দরকার হলে একেবারে ক্রসফায়ার করে দেওয়া যাবে। পান্তাবুড়ি এই আইডিয়া পছন্দ করল না। সে বাড়ি ফিরে আসলো।

বাড়ি ফিরবার সময় তার ইন্ডাকশন কয়েল, ইলেক্ট্রিক রেজার আর রিমোট কন্ট্রোলারের কথা মনে হল। সে তাদের সকলকে তার থলেয় করে নিয়ে এল আর এলিয়েনের কাছ থেকে একটা ইএমপি জেনারেটর নিয়ে আসলো।

পান্তাবুড়ি যখন বাড়ির আঙিনায় এসেছে, তখন রেজার তাকে বলল, ‘আমাকে গেটের সামনে রেখে দাও।’

তাই বুড়ি রেজারটাকে গেটের সামনে রেখে দিল।

তারপর যখন সে ঘরে উঠতে যাচ্ছে, তখন রিমোট কন্ট্রোলার বলল, ‘আমাকে সোফার উপর রেখে দাও।’

তাই বুড়ি রিমোট কন্ট্রোলারটাকে সোফার উপর রেখে দিল।

তখন ইএমপি জেনারেটর বললো, ‘আমাকে জানালার পাশে রাখ।’ শুনে বুড়ি তাই করল। শেষে ইন্ডাকশন কয়েল বলল, ‘আমাকে তোমার ফ্রিজের হাতলে লাগিয়ে রাখ।’

বুড়ি তাই করল।


তারপর রাত হলে বুড়ি রান্না-খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে রইল।

ঢের রাত্রে চোর এসেছে। সে তোর আর জানে না, সেদিন বুড়ি কি ফন্দি করেছে। জানালা দিয়ে ঢোকার সময় তার নাইট ভিশন গগলস পরে নিল, কিন্তু ইএমপি এর ম্যাগনেটিক পালসে সেটা নষ্ট হয়ে গেল। চোর তো আর কিছু দেখে না চোখে। তবে পান্তা চুরি করতে করতে তার মুখস্ত কোথায় ফ্রিজ। হাতড়ে হাতড়ে ফ্রিজে যেই হাত দিয়েছে, কয়েলের তারে হাত আটকে হাই ভোল্টেজ কারেন্ট শক খেল। আর শক খেয়ে পড়বি তো পড় ছিটকে গিয়ে সোফার উপরে। সোফার উপরে ছিল রিমোট, সাধারণ রিমোট তো নয়। সেটার কারণে শুধু বুড়ির নয়, আশেপাশের সব বাসার টিভি চালু হয়ে গেল উচ্চস্বরে। পুরা এলাকায় বিশাল চিৎকার “মার ঘুরিয়ে! মার ঘুরিয়ে!” রাগে এলাকাবাসী বের হয়ে এল লাঠিসোটা হাতে। চোর তখন ব্যথা আর ভয়ে পাগলের মতো হয়ে যেই ঘর থেকে ছুটে বেরুবে, অমনি সেই তার পা পড়েছে রেজারে। দাঁড়ি কাটার রেজার চালু হয়ে তার আঙ্গুল গেল মোরব্বা হয়ে। চিৎকার করে উঠল চোর, ‘ও মা গো!’ তা শুনে পাড়ার লোক সেই বাড়িতে ছুটে এসে বললে, ‘এই বেটা চোর! ধর বেটাকে! মার বেটাকে!’


কিছুক্ষণ সিরিয়াস ধোলাইয়ের পরে উপস্থিত জনতা নিজেরাই চোরকে দিয়ে আসলো থানাতে। বেচারা চোর দারুণ শিক্ষা পেল।

ডিজিটাল যুগে চোর ধরতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা অনেক উপকারের তা তো দেখলেই। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করো যন্ত্রপাতি কীভাবে মানুষের মতো কথা বলে, সে গল্প না হয় আরেকদিন বলব।


(লোকগল্প অনুসারে)