কারা এই আইএস?

জানা অজানা July 4, 2016 2,332
কারা এই আইএস?

ইরাক ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি অঞ্চলজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে সুন্নি আরব জঙ্গিদের সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা থেকে বেরিয়ে এসে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।


কিছুদিন আগেও সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অব দি ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট/সিরিয়া (আইএসআইএল/আইএসআইএস)।


ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান ও লেবাননের অংশবিশেষ নিয়ে একটি অঞ্চলজুড়ে ‘খিলাফত’ পদ্ধতির ইসলামী রাষ্ট্র্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আইএস। তারা বাগদাদের শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতোমধ্যে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে নিয়েছে।


সিরিয়ায় সরকারবিরোধী লড়াইয়েও সংগঠনটি প্রভাব বিস্তার করছে। আইএসের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি নিজেকে তাদের অধিকৃত অঞ্চলের ‘খলিফা’ হিসেবে ঘোষণা করেন। আইএসের যোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যা অজানা হলেও সংগঠনটির পক্ষে হাজার হাজার জিহাদি ইরাকে লড়াই করছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের মধ্যে বিদেশি মুসলিমের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।


আইএসের নেতা আবু বকর ইরাকে ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযান শুরুর পরপরই জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত হন বলে ধারণা করা হয়। তিনি ২০১০ সালে আল-কায়েদার ইরাক শাখার নেতৃত্বে আসেন।


আবু বকর যখন আইএসআইএলের দায়িত্ব নেন, তখন সেটি আল-কায়েদার একটি শাখা হিসেবে পরিচিত ছিল। পরে তিনি একে পুনর্গঠন করে আল-কায়েদার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন।


নিজস্ব রেডিও স্টেশন, বিভিন্ন ভাষায় লেখা ম্যাগাজিন, ভিডিও, ফটো এবং রিপোর্ট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রোপাগাণ্ডা বা প্রচারণা চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট এই ধারণাই সবার মনে জাগাতে চায় যে এই সংগঠনটি নিজেই একটা স্বতন্ত্র রাষ্ট্র ব্যবস্থা।


এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, লাইম লাইটে থাকার জন্য আইএস স্তম্ভিত হওয়ার মতো উচ্চমানের ভিডিও প্রকাশ করে সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্ট্রি আকর্ষণ করে এবং সংবাদের শিরোনামে থাকতে চায়।


তাদের এই প্রচারণার মধ্য দিয়ে তারা একদিকে যেমন নতুন সদস্য এবং সমর্থক জোগাড়ের চেষ্টা করে, একইভাবে এগুলোকে তারা ব্যবহার করে তাদের ব্যর্থতার ঢাকার জন্য এবং মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজে।


বহুভাষিক অপারেশন:২০১৪ সালের মাঝামাঝি যে সময়টিতে আইএস ভূমি দখলের কাজে সফল হতে শুরু করে, তখন থেকেই তারা মিডিয়ায় তাদের তৎপরতার গতি বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য তারা একাধিক ভাষায় প্রোপাগাণ্ডা চালানোর কৌশল গ্রহণ করে।


আইএসের একটি নিজস্ব রেডিও স্টেশন রয়েছে, যার নাম আল-বায়ান। মূলত ইরাক এবং সিরিয়া থেকে এর সম্প্রচার শোনা যায়। ওই এলাকায় আইএস যে প্রবল শক্তিশালী সংগঠন এটা প্রমাণ করাই এই স্টেশনের মূল কাজ।


এর আগে আইএস টেলিভিশন স্টেশন চালু করারো চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই কাজে জঙ্গিদলটি সফল হয়নি। ইন্টারনেট-ভিত্তিক টিভি চালু করা প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।


আল-বায়ান থেকে প্রতিদিন খবরের যে বুলেটিন প্রচারিত হয়, ছয়টি ভাষায় সেটি তর্জমা করা হয় এবং বডকাস্টের মাধ্যমে সেটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ভাষাগুলো হলো আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, তুর্কি এবং কুর্দি।


এর পাশাপাশি আইএস চীনা মুসলমানদের জন্য উইঘার ভাষায়, ইন্দোনেশিয়ার বাহাসা এবং বলকান অঞ্চলের কদটি ভাষাতেও সম্প্র্রচার করে থাকে।


আইএসের তরফে যে সব ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয় তার মূল ভাষা ইংরেজি। এই ম্যাগাজিনের নাম দাবিক। প্রথম প্রকাশ ২০১৪ সালের জুলাই মাসে। এর ফরাসি, রুশ এবং তুর্কি সংস্করণও প্রকাশিত হচ্ছে। আরবি ভাষায় জন্য আইএসের রয়েছে একটি আলাদা ম্যাগাজিন। যার নাম আল-নাবা।


শিরোনাম দখলের লড়াই:এসব কিছুর পাশাপাশি আইএস প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ভিডিও এবং স্টিল ছবি প্রকাশ করে, যার মধ্য দিয়ে সংগঠনটি দেখাতে চায় যে দেশ শাসনের দক্ষতা তার রয়েছে এবং তার অধীন সামরিক বাহিনী লড়াইয়ের ময়দানে অপরাজেয়।


এসব প্রচারের মধ্য দিয়ে আইএস তার সম্ভাব্য সমর্থকদের মনে একটি অলীক রাষ্ট্রের ছবি তৈরি করতে চায়। কোনো কোনো ভিডিও প্রকাশের আগে আইএস সংবাদমাধ্যমকে আগাম খবর জানায় এবং নানা ভাষায় সেটির সংস্করণ তৈরি করা হয়। কখনো কখনো সে সব ভিডিওতে হলিউডের কায়দায় অডিও-ভিডিও এফেক্টস ব্যবহার করা হয় যেগুলো তরুণ সম্প্রদায়কে খুবই আকর্ষণ করে।


আইএসের একটি নতুন কৌশল হলোও একই বিষয়ের ওপর একই সঙ্গে একাধিক ভিডিও প্রকাশ করা। এবং একটি বিশেষ বার্তা সবার মনে পৌঁছে দেয়া।


অনলাইনে আধুনিক প্রচারণা:আইএসের মিডিয়া বিভাগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলোও কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। এটা তারা করতে পারে কারণ সোশাল মিডিয়াকে তারা খুবই দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করে।


আইএসের সমর্থক এবং অনুগামীরা এসব পোস্ট ছড়িয়ে দেয় সারা বিশ্বে।


টুইটার এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে আইএসের সঙ্গে সম্পর্কিত অ্যাকাউন্টগুলো বার বার বন্ধ করা হলেও ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে এই জঙ্গিদলের কন্টেন্ট নিয়মিতভাবেই পোস্ট করা হয়।


প্রোপাগাণ্ডার মালমসলা গোপনীয়তার সঙ্গে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে আইএস সম্প্র্রতি দক্ষতার সঙ্গে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতে শুরু করেছে।