২৭ তম তারাবিহঃআজকের তারাবিতে কুরআন তিলাওয়াত সম্পন্ন হবে!

ইসলামিক শিক্ষা July 2, 2016 1,526
২৭ তম তারাবিহঃআজকের তারাবিতে কুরআন তিলাওয়াত সম্পন্ন হবে!

আজ রমজানের ২৭তম তারাবি। জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভের সপ্তম রজনী শুরু হবে আজ। আজকের তারাবিতে সুরা নাবা থেকে সুরা নাস পর্যন্ত সর্বশেষ ৩৭টি সুরা পড়া হবে। সে সঙ্গে ৩০তম পাড়ার তিলাওয়াত শেষ হবে। আজকের তারাবিকে পড়া ৩৭টি সুরার সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু তুলে ধরা হলো-


সুরা নাবা : আয়াত ৪৯

মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরাটি কিয়ামতের ভয়াবহতা কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের অবস্থার বর্ণনার পাশাপাশি জান্নাতএবং তাঁর অধিবাসীদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষে হাশরের ময়দানে অবিশ্বাসীদের আফসোস ও অনুশোচনার বর্ণনা ওঠে এসেছে।


সুরা নাযিআত : আয়াত ৪৬

সুরা নাযিআত মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা কিয়ামত অবশ্যই আসবে। এবং তা অতি সন্নিকটে। তাই আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে কিভাবে হককে বাতিলের বিজয়ী করবেন তা বর্ণনা করেছেন। উপমা স্বরূপ হজরত মুসা আলাইহিস সালাম কিভাবে ফেরাউনের ওপর বিজয় লাভ করেছিলেন এবং ফেরাউন ধ্বংস হয়েছিল তা ওঠে এসেছে এ সুরায়।


সুরা আবাসা : আয়াত ৪২

মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় দানের পদ্ধতি, উপদেশ গ্রহণ না করার প্রতি তিরস্কার, উপদেশ গ্রহণ থেকে বিমুখ ব্যক্তিদের পরলৌকিক শাস্তি এবং উপদেশ গ্রহণকারীদের পরকালীন জীবনের পুরস্কারের বর্ণনা করা হয়েছে।


সুরা তাকভীর : আয়াত ২৯

মক্কায় অবতীর্ণ সুরা তাকভীরে কিয়ামতের দৃশ্যকে চিত্রায়ন করা হয়েছে। তাইতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে বক্তি কিয়ামতের দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে চায়, সে যেন সুরা তাকভীর এবং সুরা ইনশিকাক পাঠ করে।


সুরা ইনফিতার : আয়াত ১৯

এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এ সুরার মূল বিষয়বস্তু হলো পরকাল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিনকে দেখতে চায়, সে যেন সুরা তাকভীর, ইনফিতার ও ইনশিকাক পাঠ করে।


সুরা মুতাফফিফিন : আয়াত ৩৬

মক্কায় নাজিল হওয়া সুরা মুতাফফিফিনে আল্লাহ তাআলা পরকালের বিষয় তুলে ধরেছেন। এ সুরায় ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রয়ের সময় বেশি গ্রহণ করে বিক্রয়ের সময় কম দেয়ার অনৈতিকতা তুলে ধরা হয়েছে। এ সুরার শেষে সৎ ও ভালো লোকদের সুখ-শান্তি আলোচনা করা হয়েছে। কাফেরদের ঠাট্টা-বিদ্রুপের জন্য তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে কাফেরদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।


সুরা ইনশিক্বাক্ব : আয়াত ২৫

মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায়ও কিয়ামতের চিত্রায়ন করা হয়েছে।


সুরা বুরুজ : আয়াত ২২

মক্কায় অবতীর্ণ সুরা বুরুজে কাফেররা ঈমানদারের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন করেছিল তার নির্মম পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং সে সঙ্গে মুসলমানদেরকে উত্তম প্রতিফলের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।


সুরা ত্বারেক : আয়াত ১৭

সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় তাওহিদের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং সর্বশেষ কাফেরদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা জ্ঞাত, যাতে তারা সফলতা লাভ করতে পারবে না, তার বিবরণ ওঠে এসেছে।


সুরা আ’লা : আয়াত ১৯

মক্কা অবতীর্ণ এ সুরায় তাওহিদের আলাচনা করার পাশাপাশি বিশ্বনবিকে উপদেশ প্রদান এবং পাপিষ্ঠ ও কাফেরদের অশুভ পরিণতি এবং ঈমানদারের পরকালীন সাফল্যের কথা ওঠে এসেছে।


সুরা গাশিয়া : আয়াত ২৬

২৬ আয়াত বিশিষ্ট মক্কী সুরায় তাওহিদ ও পরকালের আলোচনা করা হয়েছে।


সুরা ফজর : আয়াত ৩০

মক্কী সুরা আল ফজরে পরকালের শাস্তি এবং পুরস্কারের আলোচনা করা হয়েছে। কারণ মক্কার অবিশ্বাসীরা পরকালকে বিশ্বাসই করতো না।


সুরা বালাদ : আয়াত ২০

এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ প্রাথমিক প্রত্যাদেশ সমূহের অন্যতম। এ সুরায় মক্কা বিজয়ের সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী ও সৎকর্মের আলোচনা করা হয়েছে।


সুরা শামস : আয়াত ১৫

মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় নেকি ও বদ, পাপ ও পূণ্যের পার্থক্য বুঝানোর জন্য নাজিল করা হয়েছে। যারা নেকি ও বদ, পাপ এবং পূণ্যকে অবিশ্বাস করে তাদের শাস্তির বিষয়টিও ওঠে এসেছে এ সুরায়।


সুরা লাইল : আয়াত ২১

মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমাণ আনা; তাঁর সন্তুষ্টিতে দান-খয়রাত করা; উদারতা ও মহানুভবতার গুণ অর্জন করার ইঙ্গিত প্রদান। পাশাপাশি কুফর ও শিরকে লিপ্ত হওয়া, অহংকার ও কার্পণ্য করা, মানুষের হক বিনষ্ট করায় রয়েছে পরকালীন জীবনের অবাধারিত শাস্তি।


সুরা দোহা : আয়াত ১১

মক্কায় অবতীর্ণ সুরা দোহায় আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবিবকে সান্ত্বনার জন্য নাজিল করেছেন।


সুরা আলাম নাশরাহ : আয়াত ৮

নবুয়তের পূর্বে বিশ্বনবি মক্কায় ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন; ইসলামের দাওয়াত দেয়ায় যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, সে জন্য মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় তাঁকে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে।


সুরা ত্বীন : আয়াত ৮

এ সুরাটিও মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এ সুরায় মানুষের উৎপত্তি ও পরিণতির বিষয় আলোচিত হয়েছে।


সুরা আ’লাক্ব : আয়াত ১৯

মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় রয়েছে বিশ্বনবির প্রতি নাজিলকৃত প্রথম প্রত্যাদেশ। যে আয়াতের মাধ্যমে নবুয়তের সূচনা হয়েছিল। তাছাড়া এ সুরায় বিশ্বনবির বাইতুল্লায় নামাজ আদায়কালীন সময়ে আবু জেহেলের ধমকের বিষয়ও ওঠে এসেছে।


সুরা ক্বদর : আয়াত ৫

এ সুরার অবতীর্ণের স্থান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ সুরায় কুরআন মাজিদের মর্যাদা, মূল্য ও গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। লাইলাতুল কদরের মর্যাদার বিষয়টিও এ সুরায় বর্ণনা করা হয়েছে।


সুরা বায়্যিনাহ : আয়াত ৮

এ সুরায় রাসুল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা আলোচিত হয়েছে।


সুরা যিলযাল : আয়াত ৮

মক্কায় অবতীর্ণ সুরায় কিয়ামত ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্ক আলোচনা করা হয়েছে।


সুরা আ’দিয়াত : আয়াত ১১

মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরাটিতে পরকালের প্রতি অবিশ্বাসের ভয়াবহ পরিণাম দুঃসংবাদের পাশাপাশি পরকালের বিচারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের দিক-নির্দেশনা আলোচিত হয়েছে।


সুরা ক্বারিয়াহ : আয়াত ১১

মক্কী সুরা ক্বারিয়া। এ সুরায় কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া; পরকালের পুনরায় জীবিত হওয়া, দুনিয়ার জীবনের কৃতকর্মের হিসাব প্রদান এবং প্রতিদান গ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।


সুরা তাকাছুর : আয়াত ৮

এ সুরাটিও মক্কায় অবতীর্ণ। এতে দুনিয়ার পুজা এবং বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে মানুষকে আখিরাতপন্থী এবং পরকালমুখী করাই এ সুরার উদ্দেশ্য।


সুরা আসর : আয়াত ৩

অতিশয় ক্ষুদ্র সুরা অথচ ব্যাপক অর্থবোধক। এ সুরায় মানুষের জীবনের নীতি-আদর্শ ও কর্ম কেমন হওয়া উচিত তা তুলে ধরেছেন।


সুরা হুমাযাহ : আয়াত ৯

এ সুরায় ইসলাম পূর্ব জাহেলী সমাজের অর্থ পুজারি ধনী সম্প্রদায়ের মধ্যে কতগুলো মারাত্মক ধরনের নৈতিক ত্রুটি ও দোষ বিদ্যমান ছিল তা তুলে ধরা হয়েছে।


সুরা ফিল : আয়াত ৫

মক্কায় অবর্তীণ এ ঐতিহাসকি সুরা। যেখানে বাইতুল্লাহকে ধ্বংসে আবরাহার বিশাল হস্তি বাহিনীর আলোচনা হয়েছে। আবার হস্তিবাহিনীকে ধ্বংসে আল্লাহর সিদ্ধান্ত আলোচিত হয়েছে এ সুরায়।


সুরা কুরাইশ : আয়াত ৪

এ সুরায় শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলা ইবাদাতের দাওয়াত দেয়ার জন্য নাজিল হয়েছে।


সুরা মাউন : আয়াত ৭

পরকালে অবিশ্বাসীদের চরিত্র কতটা নিচু তার চরিত্র চিত্রায়ন করা হয়েছে এ সুরায়।


সুরা কাউসার : আয়াত ৩

বিশ্বনরি প্রতি অজস্র নিয়ামতের বর্ণনা লুকায়িত আছে এ সুরায়।


সুরা কাফিরুন : আয়াত ৬

এ সুরায় তাওহিদের শিক্ষা এবং মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণের ঘোষণা হয়েছে। প্রত্যেকের ধর্মমত আলোচিত হয়েছে এ সুরায়।


সুরা নছর : আয়াত ৩

আরবের বুকে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুসংবাদ এবং পৌত্তলিকতাকে চিরতরে নির্বাসন দেয়া শুভ সংকেত হলো এ সুরা।


সুরা লাহাব : আয়াত ৫

ইসলামের কোনো দুশমনের নাম উচ্চারণ করে কোনো সুরা অবতীর্ণ হয়নি। ব্যতিক্রম শুধু আবু লাহাব, এ সুরায় তার এবং তার স্ত্রীকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। তারা বিশ্বনবির দাওয়াতি মিশনের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছিল।


সুরা ইখলাস : আয়াত ৪

এ সুরাটিতে আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর পরিচয়ের বর্ণনা করা হয়েছে।


সুরা ফালাক্ব ও নাস : আয়াত যথাক্রমে ৫ ও ৬

এ সুরা দুটিতে আরবের জাহেলি সমাজের নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বের প্রেক্ষাপট এবং তারা আল্লাহকে একেবারে ভুলে গিয়েছিল। আল্লাহর সম্মুখে নানা প্রতিকৃতি সমাসীন করেছিল। এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতে বিশ্বনরি ইসলামের দাওয়াত শুরু করেন।


সে সময় অবিশ্বাসী কাফের সকল অপচেষ্টায় ইসলামের অগ্রযাত্রা যখন ছুটে চলছিল তখন এ সুরাদ্বয়ের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য ও তাঁর স্মরণাপন্ন হওয়ার নির্দেশ ছিল।


সৃষ্টিকুলের যাবতীয় অনিষ্ট হতে মুক্ত হতেই বিশ্বনবি এ সুরাদ্বয় দিয়ে সাহায্য কামনা করতেন।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।