তওবায় মাপ করিয়ে নিন গুনাহর খাতা

ইসলামিক শিক্ষা July 2, 2016 1,458
তওবায় মাপ করিয়ে নিন গুনাহর খাতা

রহমতের দশক পেরিয়ে মাগফিরাতের দশক শেষ করেছি আমরা। এরপর নাজাতের দশক। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ‘রাহমানুর রাহিমের’ কতটুকু ‘রহমত’ অর্জন করতে পেরেছি এবং মাগফিরাতের মাপ পেয়েছি কিনা— এসব ভেবে দেখতে হবে।


আমাদের জীবনে গুনাহের শেষ নেই। মাগফিরাতের দশক গুনাহ মাপের প্যাকেজ। এ দশ দিন আল্লাহ তার বান্দাদের ক্ষমা করতে থাকেন। যদিও ক্ষমার দরজা সবসময়ই খোলা রয়েছে, তারপরও এ দশ দিন বিশেষ অফার হিসেবেই ধরা হয়। মহান মাবুদের দরবারে কেঁদেকেটে চোখের পানিতে গুনাহ ঝরানোর উত্তম সময় চলছে। হে পাপের পথের পথিক! ফিরে এসো কল্যাণের পথে, আল্লাহর ক্ষমা তোমার পথ চেয়েই বসে আছে। আল্লাহর এ আহ্বান তোমার জন্যই। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দৌড়ে এসো, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের মতো। আর এটা তৈরি হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩৩।)


এ আয়াত প্রসঙ্গে ইমাম রাজী (র.) চমৎকার একটি কথা বলেছেন। দুনিয়ার নিয়ম হলো, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি পাওনাদার থেকে পালিয়ে বাঁচে। সে মনে করে, কোনোভাবে যদি পাওনাদার আমাকে ধরে ফেলে তাহলে আর রক্ষা নেই। তেমনি বান্দাও গুনাহ করে করে এবং আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করে তাঁর কাছে ঋণী হয়ে গেছে। বান্দা যেন পাওনাদার ভেবে আল্লাহ থেকে পালিয়ে না বেড়ায়, তাই আল্লাহতায়ালা দয়া ও ক্ষমার হাত প্রসারিত করে প্রেমময় কণ্ঠে ডাক দিচ্ছেন, ‘হে বান্দা! তোমরা রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দৌড়ে এসো।’ (তাফসিরে কাবির।)


ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (র.) লেখেন, ‘যারা আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মেনে তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করেছে, আল্লাহতায়ালা ওই সব মুত্তাকি বান্দাদের জন্য আকাশ ও জমিনের মতো বিশাল জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন।’ (তাফসিরে জালালাইন।) মাওলানা সালাহ উদ্দিন ইউসুফ লেখেন, ‘আল্লাহতায়ালা বান্দাকে বলছেন, ওহে বান্দা! পার্থিব খেল-তামাশায় পড়ে না থেকে তুমি আমার ক্ষমা এবং জান্নাতের জন্য প্রতিযোগিতা কর। (তাফসিরে আহসানুল বয়ান।)


মহান আল্লাহর ক্ষমা পেতে হলে তার নির্দেশিত পথে চলতে হবে। তওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওহে তোমরা যারা ইমান এনেছ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, বিশুদ্ধ তওবা। সম্ভবত তোমাদের প্রভু তোমাদের আমলনামা থেকে খারাপ কাজগুলো মুছে দেবেন এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (সূরা তাহরিম : ৮।)


হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, বিশুদ্ধ তওবা কী? তিনি বললেন, ‘আমিও রসুল (সা.) কে এই প্রশ্নই করেছিলাম। তিনি (সা.) বলেছেন, ‘ভুল করে গুনাহ হয়ে গেলে তার জন্য লজ্জিত হওয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। অতঃপর ওই গুনাহের প্রতি আর না ঝোঁকাই হচ্ছে বিশুদ্ধ তওবা।’ (ইবনে কাসির।)


এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জেনে রাখ! আল্লাহ সেই লোকদের তওবাই কবুল করেন, যারা না জেনে বা ভুল করে মন্দ কাজ করে ফেলে এবং পরক্ষণেই ভীষণ অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে। এরাই সেসব লোক আল্লাহ যাদের তওবা কবুল করেন। আর আল্লাহ তো সর্বজ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।’ সূরা নিসা : ১৭।)


অনেকেই অনবরত গুনাহ করতে থাকেন আর ভাবেন পরে তওবা করে নিব। এ ধরনের মানসিকতা শয়তানের ওয়াসওয়াসা ছাড়া কিছুই নয়। এদের সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওই সব লোকের তওবা করা নিষ্ফল, যারা মন্দ কাজ চালিয়েই যেতে থাকে। অতঃপর যখন তাদের কারও মৃত্যু এসে পড়ে, তখন সে বলে, আমি এখন তওবা করছি। আর ওই সব লোকের তওবাও নিষ্ফল, যাদের মৃত্যু হয় কুফরির ওপর। এসব লোকের জন্যই আমরা প্রস্তুত রেখেছি বেদনাদায়ক আজাব। (সূরা নিসা : ১৮।)


মাগফিরাতের দশকে মহান আল্লাহর কাছে মনপ্রাণ উজাড় করে প্রার্থনা করব, ক্ষমা চাইব। অতীতে আমরা যত বড় পাপই করে থাকি না কেন তওবা করলে আল্লাহতায়ালা সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, কারণ আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, দয়াময়।’ (সূরা নিসা : ১০৬।)


সহি বুখারিতে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘গুনাহ থেকে তওবাকারীর অবস্থা এমন, যেন সে কোনো গুনাহই করেনি।’ হে আল্লাহ আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন। বিনিময় আমাদের জান্নাতের বাসিন্দা বানিয়ে নিন।