২৪ তম তারাবিহঃ দুনিয়া ও পরকালের নিয়ামাতের বর্ণনা পড়া হবে আজকের তারাবিতে!

ইসলামিক শিক্ষা June 29, 2016 1,239
২৪ তম তারাবিহঃ দুনিয়া ও পরকালের নিয়ামাতের বর্ণনা পড়া হবে আজকের তারাবিতে!

আজ রমজানের ২৪তম তারাবি। জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভের চতুর্থ দিন আজ। আজকের তারাবিতে সুরা যারিয়াত (৩১-৬০), সুরা তুর, সুরা নঝম, সুরা ক্বামার, সুরা রাহমান, সুরা ওয়াক্বিয়া, সুরা হাদিদ পড়া হবে। সে সঙ্গে ২৭তম পাড়ার তিলাওয়াত শেষ হবে। আজকের তারাবির সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি তুলে ধরা হলো-


সুরা যারিয়াত : আয়াত ৬০

সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। একত্ববাদ, নবুয়ত ও হাশরের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে সুরাটিতে। সর্বোপরি এ সুরার শেষে ঘোষণা করা হয়েছে যে, মানবজাতিকে আল্লাহ তাআলার ইবাদাত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।


সুরা তুর : আয়াত ৪৯

মক্কা অবতীর্ণ সরা তুরে তিনটি বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।


১. পরকালীন জীবনের সত্যতা;


২. সত্যদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে কঠের সতর্কবাণী;


৩. পরকালীন জীবনে সত্য-সাধকদের জন্যে পুরস্কারের শুভ সংবাদ। পাশাপাশি এ সুরায় তাওহিদ, রিসালাত এবং কিয়ামাতের ভয়াবহতার আলোচনা হয়েছে।


সুরা নঝম : আয়াত ৬২

মক্কায় অবতীর্ণ সুরা নঝমে আল্লাহ তাআলা বিশ্বনরি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত ও রিসালাতের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রত্যেকটি কথাকে যে মানবজাতির জন্য অনুসরণীয় তাও ঘোষণা করা হয়েছে।


বিশেষ করে বিশ্বনবির পবিত্র জবান থেকে যা বের হয় তা শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওহি।


এ সুরার আলোচ্য বিষয় হলো- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্য নবি হওয়া এবং তাঁর প্রতি অবতীর্ণ ওহিতে সন্দেহ ও সংশয়ের অবকাশ না থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে। এরপর মুশরিকদের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।


সুরা ক্বামার : আয়াত ৫৫

এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। সুরাটিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি বিশেষ মুযেজার উল্লেখ রয়েছে। যা বিশ্বনবি নবুয়তের দলিল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।


সুরা ক্বামারের আলোচিত বিষয়গুলো হলো- ক্বিয়ামাত নিকটবর্তী হওয়ার ঘোষণা; তাওহিদ এবং রিসালাতের দলিল প্রমাণ উল্লেখ হয়েছে; ঈমান এবং নেক আমলের জন্য পুরস্কারের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আল্লাহর নাফরমানির শাস্তি সম্পর্কেও সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।


আরো রয়েছে মানুষের পুনর্জীবনের সুস্পষ্ট ঘোষণা; কুরআনের শিক্ষাকে সহজ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।


বিশেষ করে ইসলাম পূর্ববর্তী যুগে যারা এ পৃথিবীতে আল্লাহর নাফরমানি করেছে- আদ-সামুদ জাতি, হজরত লুত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়, ফেরাউনের দলবলসহ তাদেরকে কিভাবে ধ্বংস করা হয়েছে এ সকল বর্ণনা ওঠে এসেছে এ সুরায়।


সুরা রাহমান : আয়াত ৭৮

মাদিনায় অবতীর্ণ শ্রুতিমধূর ও ব্যাপক পরিচিত ও তিলাওয়াতকৃত সুরা আর রহমানে দুনিয়া ও আখিরাতের আল্লাহর অনন্ত অসীম নিয়ামাতের বর্ণনা করা হয়েছে। এ সুরার মূল বক্তব্য হলো-


>> বিশ্বলোকের গোটা ব্যবস্থাপনা এক আল্লাহর ছাড়া আর কারো কতৃত্ব নেই;


>> গোটা বিশ্বলোকের ব্যবস্থাপনা পূর্ণ ভারসাম্যের সঙ্গে ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কোনোভাবে এ ভারসাম্য বিনষ্ট হবে না;


>> আল্লাহ তাআলার কুদরত ও বিস্ময়কর কার্যকলাপের কথা বলার সঙ্গে মানব-দানবরা আল্লাহর যে নিয়ামাত ভোগ করছে, তার দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে;


>> মানুষ ও জিন জাতিকে তার কর্মের হিসাবের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এ সুরায় পৃথিবীর নাফরমান মানুষ ও জিনের মর্মান্তিক পরিণতির কথা বলা উল্লেখ করা হয়েছে।


>> মানব ও দানবদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে, পরকালকে ভয় করেছে, তাদেরকে প্রদেয় নিয়ামাতের বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হয়েছে এ সুরায়।


সুরা ওয়াক্বিয়া : আয়াত ৯৬

সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। আল্লাহ তাআলার অনন্ত অসীম শক্তি ও অপূর্ব মহিমার বিস্তারিত বিবরণ স্থান পেয়েছে সুরা ওয়াক্বিয়ায়। বিশেষ করে পরকালে মানুষের সমগ্র জীবনের কর্মকাণ্ডের পরিণতি অবশ্যই ভোগ করতে হবে।


জন্মের ন্যায় মৃত্যু যেমন সত্য, ঠিক মৃত্যুর ন্যায় পরকাল, হাশরের ময়দানে পুনরুত্থানও সত্য। যার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে এ সুরায়। সর্বোপরি এ সুরার শেষে আখিরাতের আলোচনা বর্ণনা করা হয়েছে।


সুরা হাদিদ : আয়াত ২৯

মদিনায় অবতীর্ণ সুরা হাদিদে ইসলামি শরিয়তের বুনিয়াদি বিধি-নিষেধ এবং মৌলিক আক্বিদা তথা তাওহিদ সম্পর্কে হিদায়াত রয়েছে এবং উত্তম চরিত্র অর্জনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ সুরার মূল বক্তব্য হলো-


১. বিশ্বজগৎ এক আল্লাহর সৃষ্টি, তিনি ভূ-মণ্ডল ও নভোমণ্ডল সব কিছুর একচ্ছত্র অধিপতি। সবকিছুই তার কর্তৃত্বাধীন। তাঁর কর্তৃত্বের কোনো কিছুতেই শরিক নেই।


২. সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য; আল্লাহর দ্বীনকে কায়েম করার জন্য মানুষের কর্তব্য হলো- আত্মত্যাগের পরিচয় দেয়া।


৩. দুনিয়ার ধন-সম্পদ, সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্য নিতান্ত ক্ষণস্থায়ী বিষয়। দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনকে পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনের সম্বল সংগ্রহে ব্যয় করাই কল্যাণকামী মানুষের কর্তব্য।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।