জলদস্যু ভাইকিংসদের কথা!

জানা অজানা June 27, 2016 1,287
জলদস্যু ভাইকিংসদের কথা!

ভাইকিংস। অনেকেই এদের বলে জলদস্যু, ডাকাত এবং সমুদ্রের ত্রাস। ইউরোপ ইতিহাসে যুদ্ধবাজ এবং লুটেরা জাতি হিসেবে এদের অনেক কথাই বীরদর্পে বলা আছে।


তবে এরা ছিল অনেকটাই বর্বর জাতি। লুটতরাজ, খুন, এসব ছিল ওদের কাছে বীরত্ব। এরা যে যত বেশি ডাকাতি করতে পারতো সে নিজেকে ততো বড় বীর মনে করত।



ভাইকিংস শব্দটি এসেছে নরওয়ের নর্স ভাষা থেকে। নর্স ভাষায় ভাইকিংস শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘জলদস্যু’ আর একভাবে এই শব্দকে বিশ্লেষণ করলে এর অর্থ দাঁড়ায় উপসাগরে বসবাসকারী মানুষ।


প্রায় ৮০০ সাল থেকে ভাইকিংসদের উত্থান শুরু হয়। প্রায় ১০৫০ সাল পর্যন্ত সারা ইউরোপসহ অত্র অঞ্চল দাপিয়ে বেড়াই এরা। এবং এই সময়কালকেই বলা হয় ‘স্ক্যানডেনিভিয়া সম্প্র্রসারণ’ বা ‘ভাইকিং’ মূলত নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং সুইডেন ছিল এই ভাইকিংসদের আবাস্থল। এই তিন দেশকেই একত্রে তখন ‘স্ক্যানডেনিভিয়’ বলা হতো।


ভাইকিংসদের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল এরা খুব ভালো জলদস্যু ভাইকিংসদের কথানৌকা বা জাহাজ তৈরি করতে পারত। এদের নৌকা বা জাহাজগুলো দেখতে যেমন বাহারি সৌন্দর্যে ভরপুর তেমনি ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিশাল লম্বা নৌকা বা জাহাজগুলো ডক বা বন্দর ছাড়াই উপকূলীয় বা সমুদ্র তীরে ভিড়তে পারত।


ভাইকিংসদের এমন যুদ্ধবাজ মনোভাব হওয়ার পেছনে এদের শারীরিক গঠন অনেকটাই দায়ী। কারণ এরা দেখতে অনেক লম্বা এবং চউরা দেহের অধিকারী ছিল। যার ফলে এমনিতেই তারা শারীরিক শক্তির দিক দিয়ে ছিল এগিয়ে। এদের প্রধান অস্ত্র ছিল কুঠার।


ভাইকিংসরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়ে বসবাস করত। এক একটি গ্রাম নিয়ে একটি গোত্র, গোত্র প্রধানকে ‘আর্ল’ বলা হতো। এই আর্ল থাকত সব নৌকা বা জাহাজের একমাত্র মালিক। তাই ভাইকিংসরা ডাকাতি করতে গেলে এই আর্লের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এবং আর্ল নৌকা বা জাহাজ দিতে সম্মতি হলে তবেই তারা লুট করতে যেতে পারত। তবে বেশিরভাগ সময়ে ‘আর্ল’ নিজেও বের হতো অভিযানে, লুট করতে।


শুধু তাই নয়, এরা নিজেরা নিজেরাও অনেক সময় যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যেত। বিশেষ করে কোনো শক্তিশালী আর্ল তার থেকে কম শক্তি সম্পন্ন আর্লকে পরাজিত করে লুট করে নিয়ে যেত এবং পরাজিত গোত্রের আর্ল হয়ে যেত।


মজার ব্যাপার হচ্ছে এরা যে শুধু লুট করত তাই নয়। এরা ভালো ব্যবসায়ী ছিল। সেই সঙ্গে এরা নতুন নতুন জায়গায় লুট করতে গিয়ে বাস যোগ্য ভূমি অথবা নতুন নতুন দেশ আবিষ্কার করত।


ভাইকিংসরা শুরুর দিকে তাদের আশপাশেই লুট করত, ডাকাতি করত। সমুদ্র পারি দিয়ে খুব দুরে যেতে তারা ভয় পেত। কারণ তাদের জাহাজগুলো দূরপাল্লার অভিযানের জন্য শক্তিশালী হলেও তারা তখনো দিক নির্ণয় করতে শিখেনি। তবে খুব দ্রুতই তারা দিক নির্ণয়ের এক অভিনব কৌশল হিসেবে একধরনের কম্পাস আবিষ্কার করে যা দিয়ে সূর্যের অবস্থান নির্ণয়ের মধ্য দিয়ে দিক নির্ণয় করা যায়।


সেই সঙ্গে তারা এক ধরনের স্ফটিক ব্যবহার করে যা দিয়ে সূর্য অন্ধকার মেঘে ঢাকা থাকলে সেটা আকাশের দিকে ধরলে সূর্যের আলো দেখা যেত এবং দিক নির্ণয় করতে পারত। যদিও এটা খুব সহজ ছিল না। কারণ এভাবে সূর্যের অবস্থান নির্ণয় করতে গেলে অনেক গানিতিক এবং জ্যামেতিক গণনার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।


ধারণা করা হয় ভাইকিংসদের প্রথম সমুদ্রে দূর পাল্লার অভিযান শুরু হয় ‘উত্তর’ দিকে। তারা অনেক আশা আকাক্সক্ষা নিয়ে প্রথমবারের মতো সমুদ্রে উত্তর দিকে ভেসে চলে। এক পর্যায়ে তারা সমুদ্রের তীরবর্তী কিংডম অব নর্থোম্ব্রিয়া (ইংল্যান্ড)-এর এক চার্চে তারা প্রথম আক্রমণ করে। প্রচুর পরিমাণে সোনাদানা এবং ট্রেজার নিয়ে ফিরে যায়। তাদের ‘উত্তর’ দিকে এই সফল অভিযান তাদের সাহস আরো বাড়িয়ে দেয়।


পরবর্তিতে তারা আরো বড় পরিসরে উত্তরে তথা ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রাজ্যে লুটপাট এবং বসতি স্থাপনের চিন্তা ভাবনা শুরু করে। কারণ তারা বুঝতে পারে তাদের নিজেদের ভূমির চেয়ে উত্তরের ভূমি অনেক উর্বর।


তারা এখানে বসতি গড়তে পারলে তাদের আর খাদ্যভাব দেখা দেবে না। ভাইকিংসরা ধর্মের দিক দিয়ে ছিল খুব গোরা। প্রচুর কুসংস্কার তারা বিশ্বাস করত।


তারা মূলত প্যাগান ধর্মের অনুসারী ছিল। তারা বিভিন্ন শক্তির পূজা করত। দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে মানুষ অর্থাৎ ‘নরবলি’ পর্যন্ত দিত।