চলুন একবার ঘুরে আসি 'দিঘা'র সমদ্র সৈকত

দেখা হয় নাই June 26, 2016 4,217
চলুন একবার ঘুরে আসি 'দিঘা'র সমদ্র সৈকত

যতদূর চোখ যায়, যেনো পানি আর আকাশ একে অন্যের সঙ্গে মিশে গেছে ঠিক এক জায়গায়। দিগন্ত রেখা থেকে গোটা আকাশে খুশির রক্তিম আবির ছড়িয়ে আসে সূর্যোদয়। রাতের গভীর অন্ধকার শেষ হয়ে গোটা চরাচরজুড়ে ধ্বনিত হয় রাগ ভৈরবী। বলছিলাম সমুদ্র সৈকত 'দিঘা'র কথা।


পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র সমুদ্রকেন্দ্রিক ভ্রমণকেন্দ্র 'দিঘা'। কলকাতা থেকে মাত্র ১৮৭ কিলোমিটার দূরে মেদেনিপুর জেলায় সমুদ্র, বালিয়াড়ি, ঝাউবন, আর অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলিয়ে অপেক্ষা করছে প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের জন্য। ৭ কিলোমিটার লম্বা সমুদ্রতটের এক পাশে গভীর সমুদ্র, অন্যপাশে ঝাউ গাছের অগভীর জঙ্গল। ভেঙে পরা ঢেউয়ের পানিতে পা ভিজিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় দীর্ঘপথ। দিঘায় দুটি সৈকত রয়েছে একটি পুরানো দিঘার সৈকত, অন্যটি নতুন দিঘার সৈকত। বাঙালির এই পর্যটন কেন্দ্রের রয়েছে এক লম্বা ইতিহাস।


কিভাবে যাবেন দিঘায়

প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে বহু পর্যটক দিঘায় বেরাতে যান। কলকাতা থেকে ১৮৭ কিলোমিটার দূরত্বের এই সমুদ্র শহরে যাওয়ার জন্য আছে রেলপথ। কলকাতা থেকে রেলে চেপে পৌঁছানো যায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যে। চোখ জুড়িয়ে যাবে পথের প্রাকৃতিক শোভায়। সবুজ ধানক্ষেত, মেঠোপথ, রেললাইন থেকে দূরের ছোট গ্রাম, আর সেই গ্রামকে জড়িয়ে চলছে ছোট নদী।


যাওয়া যায় সড়ক পথেও। আছে সোনালী ত্রিভুজের রাস্তা। ঝড়ের গতিতে ছুটতে ছুটতে মাঝপথে একটু বিশ্রাম। জাতীয় সড়কের ধারে কোন হোটেলে বা পাঞ্জাবি ধাবায় জমিয়ে করা যেতে পারে খাওয়া-দাওয়া। তারপর আবার দিঘা অভিমুখে যাত্রা শুরু। কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে আছে সরকারি-বেসরকারি বাসের ব্যবস্থা। বাসে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লাগবে দিঘা যেতে।


কোথায় রাত্রিযাপন করবেন

পুরানো দিঘা এবং নতুন দিঘায় অনেক হোটেল আছে। রেলস্টেশনটি নতুন দিঘায়। বাস থামে পুরানো দিঘায়। হোটেলগুলিতে আছে আধুনিক সব ব্যবস্থা। পছন্দমতো কোন একটা বেছে নিলেই হলো। তবে আগে থেকে বুকিং করে রাখলে সুবিধা হবে।


সমুদ্রে গোসল

একদিন পুরানো দিঘায় আরেকদিন নতুন দিঘায় গোসল করে দেখতে পারেন। সমুদ্রের তীরে ছাউনির তলায় বসে ডাব খেতে ভুলবেন না যেন। কোনোভাবেই সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতাটি হাতছাড়া করবেন না।


দিঘার সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তর ননাভিরাম দৃশ্য সবার মনে সৃষ্টি করে এক স্বর্গীয় অনুভূতির। সন্ধ্যাবেলায় পুরানো দিঘার সমুদ্রতটের ধারে বসে হরেক রকমের দোকান। ঝিনুকের গয়না, ঘর সাজাবার জিনিস, নানা ধরনের শঙ্খ, শামুক, প্রবাল ইত্যাদি দিয়ে অপূর্ব সুন্দর সব জিনিস। এছাড়াও আছে মেদেনিপুরের বিখ্যাত মাদুর এবং বাঁশের নানা ধরনের শিল্পকর্ম।


কোথায় খাবেন

ভোজনরসিক বাঙালি কথাটা দুই বাংলাতেই সমানভাবে প্রযোজ্য। হোটেলে পাবেন আপনার পছন্দ অনুযায়ী সবকিছু। নানা ধরনের মাছ থেকে শুরু করে চাইনিজ, মোঘলাই, থাই কিংবা ইতালিয়ান খাবার-দাবার। সমুদ্রের ধারে পাবেন মাছ ভাজার দোকান। সেখানে পাবেন রকমারি সব মাছভাজা।


কোথায় ঘুরবেন

দিঘাতে গেলে অবশ্যই একবার যাবেন 'দ্যা মেরিন অ্যাকুরিয়াম অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে'। সমুদ্রের নিচের গোটা জগত নিয়ে তৈরি এই মেরিন অ্যাকুরিয়াম। শুধু দেখা নয় জানতে পারবেন বিভিন্ন গবেষণার তথ্যও। ১৯৮৯ সালে ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই মেরিন অ্যাকুরিয়াম অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার তৈরি করা হয়। যেটা আজ ভারতের সমুদ্র গবেষণার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।


দিঘা থেকে কিছুটা দূরেই আছে অমরাবতী লেক। এখানে কিছুটা সময় নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন। এর পাশেই আছে সর্প উদ্যান। দিঘা থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে আছে সুবর্ণরেখা নদী। পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা সীমান্তে এই নদীর রূপ মাধুরী আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এছাড়াও দেখে আসতে পারেন ঐতিহাসিক 'চন্দনেশর মন্দির'। দিঘার আশপাশে আছে আরও কয়েকটি সমুদ্র সৈকত। প্রতিটি সৈকত একটি আরেকটি থেকে একেবারে আলাদা।