২০তম তারাবিহঃ আজকের তারাবিতে পঠিত সুরাগুলোর আলোচ্য বিষয়!

ইসলামিক শিক্ষা June 25, 2016 942
২০তম তারাবিহঃ আজকের তারাবিতে পঠিত সুরাগুলোর আলোচ্য বিষয়!

আজ রমজানের ২০তম তারাবি অনুষ্ঠিত হবে। আজকের তারাবিতে সুরা ইয়াসিন (২২-৮৩), সুরা সাফফাত, সুরা সোয়াদ, সুরা যুমার (১-৩১) পড়া হবে। সে সঙ্গে ২৩তম পাড়ার তিলাওয়াত শেষ হবে। আজকের তারাবির সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি তুলে ধরা হলো-


সুরা ইয়াসিন : আয়াত (২২-৮৩)

সুরা ইয়াসিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে নাজিল হয়েছে। এ সুরায় মূলত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতকে অকাট্য প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত করার পাশাপাশি এ রিসালাতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার দাওয়াত প্রদান করা হয়েছে।


যারা বিশ্বনবির রিসালাতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে না তাদেরকে কঠিন শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করে সতর্ক করা হয়েছে। সাথে সাথে অবিশ্বাসীদেরকে যুক্তি ও অকাট্য প্রমাণ দ্বারা এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার নীতি অবলম্বন করা হয়েছে।


এ সুরায় তিন বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে-


১. তাওহিদ বা একত্ববাদ : প্রাকৃতিক নিদর্শন ও সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমে;


২. পরকাল সম্পর্কে : প্রাকৃতিক নিদর্শন, সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি এবং স্বয়ং মানুষের অস্তিত্বের সাহায্যে;


৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত ও রিসালাতের সত্যতা সম্পর্কে :


এ ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে যে, বিশ্বনবি সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে অসহনীয় কষ্ট, দুর্ভোগ, নির্যাতন সহ্য করে নবুয়তের মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। এ দাওয়াত ছিল যুক্তিযুক্ত এবং বিবেক সম্মত। যার মধ্যে সবার জন্য কল্যাণ নিহিত। এ সুরা সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি তুলে ধরা হলো-


সুরা সাফফাত : আয়াত ১৮২

সুরাটি হিজরতের প্রক্কালে মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এ সুরায় পূর্ববর্তী নবি রাসুলদের ঘটনাসমূহের ব্যাপক উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্বনবিকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্বনবি ও তাঁর সাহাবাদের ওপর যখন প্রচন্ড রকমের নির্যাতন চলছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে অর্থাৎ মক্কী জীবনের শেষ দিকে এ সুরা নাজিল হয়।


এ সুরার মৌলিক বিষয়বস্তুও ঈমানতত্ত্ব।


>> এতে তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাতের বিশ্বাসসমূহ বিভিন্ন পন্থায় উপস্থাপিত হয়েছে।


>> মুশকিরদের ভ্রান্ত আক্বিদাসমূহের খণ্ডন করা হয়েছে।


>> জান্নাত জাহান্নামের অবস্থাসমূহের চিত্রায়ন করা হয়েছে।


>> পয়গাম্বরগণের দাওয়াতের বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।


>> কাফেরদের সন্দেহ ও আপত্তির নিরসন করা হয়েছে।


>> হজরত নুহ, হজরত ইবরাহিম ও তাদের পুত্রগণ, হজরত মুসা, হজরত হারুন, হজরত ইলিয়াস, হজরত লুত ও হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনাবলী কোথাও সংক্ষেপে আবার কোথাও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।


>> মক্কার অবিশ্বাসীরা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা বলে অভিহিত করতো, এ সুরার উপসংহারে বিশদভাবে এ ধারণার খণ্ডন করা হয়েছে।


>> সবেচেয়ে শিক্ষণীয় বিষয় হলো- হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মহান জীবনেতিহাস সবিস্তার আলোচিত হয়েছে এ সুরায়। যা বিশ্বনবি ও সাহাবায়ে কেরামের জন্য বিপদের মুহূর্তে উজ্জীবিত হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছে।


সুরা সোয়াদ : আয়াত ৮৮

গোনাহ মাফের এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এ সুরার পটভূমি হলো- বিশ্বনবির পিতৃব্য আবু তালিব ইসলাম গ্রহণ না করা সত্ত্বেও তাঁর দেখা শোনা ও হিফাজত করে যাচ্ছিলেন। এ সুরার আলোচিত দিকগুলো হলো-


>> পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব, মাহাত্ম ও শান ও মানের দ্বারা প্রিয় নবির রিসালাত ও নবুয়তের দলিল প্রমান উপস্থাপন করা হয়েছে।


>> এ সুরায় হজরত দাউদ, হজরত সোলায়মান এবং হজরত আইউব আলাইহিস সালামের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে।


>> মক্কার কুরাইশরা আফসোস করে বলতো- যদি আমাদের নিকট কোনো উপদেশ গ্রন্থ নাজিল হতো। তবে আমরা পূর্ববর্তী লোকদের ন্যায় আল্লাহ তাআলার খাঁটি বান্দা হতে পারতাম। তাদের আকঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। যা এ সুরায় আলোচিত হয়েছে।


সুরা যুমার : আয়াত ১-৩১

এ সুরাটিও মক্কায় অবতীর্ণ। সুরাতুল গোরাফ নামেও এ সুরাটি পরিচিত। এ সুরার অধিকাংশ বক্তব্য তাওগিদ সম্পর্কিত। যারা তাওহিদে বিশ্বাস করে, তাদের পুরস্কার; যারা অবিশ্বাস করে তাদের শাস্তির কথাও এ সুরায় ঘোষিত হয়েছে। মানবতার কলংক শিরক তথা অংশীবাদের বাতুলতা ঘোষণা করা হয়েছে।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।