সদকাতুল ফিতর কী এবং এর পরিমাণ আসলে কত?

ইসলামিক শিক্ষা June 21, 2016 2,020
সদকাতুল ফিতর কী এবং এর পরিমাণ আসলে কত?

পবিত্র রমজান মাসে বিশেষ কিছু আমল আমাদের জন্য রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাদকাতুল ফিতর একটি অন্যতম ইবাদত। ঈদের দিন গরিবদের খাবারের জন্য শরিয়তপ্রদত্ত একটি ব্যবস্থাপত্র। সাদকাতুল ফিতর সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা এ দিনটিতে তাদেরকে অন্যের কাছে চাওয়া থেকে বিরত রাখো।


জাকাতের মতো এটিও দরিদ্র মানুষের ওপর মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আমলি সহযোগিতা। ইসলামী শরিয়তের হুকুম মোতাবেক ঈদের দিনের ফজরের নামাজের আগে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তারও ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।


(সদকাতুল ফিতর) ফিতরা কী? :ইসলামী শরিয়তের হুকুম মোতাবেক এটি একটি ওয়াজিব আমল। ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশকীয় সামগ্রী ছাড়া নিসাব পরিমাণ বা অন্য কোনো পরিমাণ সম্পদের মালিকদের পক্ষ থেকে গরিবদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের একটি অর্থ প্রদান করার বিশেষ আয়োজনকে সাদকাতুল ফিতর বলা হয়। ফিতরার পরিমাণ জনপ্রতি আধা সা অর্থাৎ এক সের চৌদ্দ ছটাক বা পৌনে দুই সের গম বা সমপরিমাণ গমের মূল্য ফিতরা হিসেবে প্রদান করতে হবে।


(সদকাতুল ফিতর) ফিতরার পরিমাণ আসলে কত?:

আমাদের দেশে প্রতি বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ইসলামিক সেন্টার মাথাপিছু একটি পরিমাণ ঘোষণা প্রদান করে এবং সে ঘোষণা অনুযায়ী কোটিপতি ও মধ্যবিত্ত নির্বিশেষে সবাই ফিতরা প্রদান করে।


আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন, নবীজি (সা.)-এর যুগে মোট চারটি পণ্য দ্বারা সাদকাতুল ফিতর আদায় করা হতো, যেমন খেজুর, কিশমিশ, জব ও পনির।


হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সাদকা আদায় করতাম।


আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (সহিহ বোখারি)


রাসুল (সা.)-এর যুগে গমের ভালো ফলন ছিল না বিধায় আলোচিত চারটি পণ্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করা হতো।


এরপর হজরত মুয়াবিয়ার (রা.) যুগে গমের ফলন বেড়ে যাওয়ায় গমকে আলোচিত চারটি পণ্যের সঙ্গে সংযোজন করা হয়। আর তখন গমের দাম ছিল বাকি চারটি পণ্যের তুলনায় বেশি। তবে মূলত এই দাম বেশি থাকার কারণেই হজরত মুয়াবিয়া গমকে ফিতরার পণ্যের তালিকভুক্ত করেছিলেন।


অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর বলেন, নবীজি (সা.) এক সা খেজুর বা এক সা জব দিয়ে ফিতরা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। পরবর্তী সময় লোকজন (সাহাবা আজমাইনরা) দুই মুদ গমকে (আধা সা) এগুলোর সমতুল্য মনে করে এবং আদায় করে। (বোখারি)


অতএব, ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, গম দ্বারা আদায় করলে আধা সা বা এক কেজি ৬২৮ গ্রাম দিলেই ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। আর বাকি চারটি পণ্য অর্থাৎ খেজুর, জব, পনির ও কিশমিশ দ্বারা আদায় করার ক্ষেত্রে জনপ্রতি এক সা বা তিন কেজি ২৫৬ গ্রাম দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে যে গম ছাড়া অন্য পণ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করলে এক সা পরিমাণ দিতে হচ্ছে, যা গমের ওজনের দ্বিগুণ এবং মূল্যের দিক দিয়েও অনেক তফাত।


হাদিসে এক সা আদায় করার কথা উল্লেখ থাকার পরও তখন এর মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় সাহাবারা আধা সা পরিমাণ গম আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখন আধা সা গমের মূল্যও অন্য চারটি পণ্যের এক সা-এর চেয়েও বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে আলোচিত পাঁচটি পণ্যের মধ্যে গমই হচ্ছে সবচেয়ে কম দামি পণ্য।


তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, বর্তমানে গমের পরিমাণ হিসেবে আধা সা ফিতরা আদায় করলে হবে? হাদিসের আলোচনা থেকে এ কথাটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে সাহাবারা খেজুর, জব, পনির ও কিশমিশ থেকে হলে এক সা পরিমাণ এবং গম থেকে হলে আধা সা পরিমাণ ফিতরা আদায় করতেন।


কারণ তখন গমের দাম অন্য সব পণ্যের তুলনায় বেশি ছিল। আর বর্তমানে অন্য চারটি পণ্যের তুলনায় গমের দাম কম। এ পর্যন্ত হাদিসের এমন কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি যে সাহাবারা সবাই সর্বনিম্ন দামের বস্তু দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন। বরং তাঁদের সবার আগ্রহ ছিল সর্বাধিক দামি পণ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা।


তাহলে বর্তমানে সবাই সর্বনিম্ন দামের পণ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করছে কেন? আমাদের সময়ের সম্পদশালী আর মধ্যবিত্ত নির্বিশেষে আধা সা গম বা তার সমপরিমাণ মূল্য দ্বারা সাদকাতুল ফিতর আদায় করা সমীচীন হচ্ছে কি? এবং এতে সাদকাতুল ফিতরের আসল হক কি আদায় হচ্ছে?


শরিয়তের বর্ণনা ও হাদিসের আলোচনা অনুযায়ী সমাধান হলো- যার সামর্থ্য অনুযায়ী উল্লিখিত পাঁচটি পণ্যের যেকোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণে ফিতরা আদায় করতেন। যার সামর্থ্য আছে উন্নতমানের খেজুর দ্বারা সে খেজুর দ্বারাই আদায় করবে।


আর যার সামর্থ্য আছে কিশমিশ কিংবা জব দ্বারা আদায় করার সে তা দ্বারা আদায় করবে। যার গম দ্বারা আদায় করা ছাড়া অন্য পণ্য দ্বারা আদায় করার সামর্থ্য নেই সে গম দ্বারা ফিতরা আদায় করবে। বেশি সম্পদশালী এবং কম সম্পদশালী নির্বিশেষ গম বা সর্বনিম্ন দামের পণ্য দ্বারা সাদকাতুল ফিতর আদায় করার বিষয়টি বিবেকবর্জিত এবং হাদিস ও শরিয়তের নির্দেশনার পরিপন্থী।


তাই আসুন! আমরা সবাই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাদকাতুল ফিতর আদায় করি এবং দায়সারা আদায় পদ্ধতি ত্যাগ করি।