বীণের তালে সাপ কিভাবে নাচে?

জানা অজানা June 14, 2016 3,840
বীণের তালে সাপ কিভাবে নাচে?

ছোটবেলা থেকে আমাদের জ্ঞানার্জন শুরু হয়। তবে কখনো কখনো নিজেদের অজান্তে কিছু কিছু ভুল জিনিসও আমাদের শেখানো হয় এবং আমরা সারাজীবন ভুলটাকেই ঠিক হিসেবে জেনে আসি। আমাদের বড়রাও হয়তো সেইসব ভুল ধারণা নিয়েই বেঁচে থাকেন।


তবে বর্তমান যুগ হলো বিজ্ঞানের যুগ। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে, ভুল তথ্য নিয়ে বেঁচে থাকাটা যেমন ঠিক নয়, তেমনি অন্যের ভুল ধারণা ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা না করাটাও একটা অন্যায়। তাই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আমাদের চারপাশের যেসব ব্যাপার আমরা সাধারনত ভুল জানি, সেগুলো আমরা সিরিজ আকারে উপস্থাপনের চেষ্টা করবো।


আজকের বিষয়টি হচ্ছে, বীণের তালে সাপ কিভাবে নাচে?

শৈশব থেকেই আমরা বাংলা সিনেমায় সাপের নাচ দেখে বড় হয়েছি। সাপুড়ে বীন বাজাচ্ছে, সাপ নাচছে- এটি পুরাতন বাংলা সিনেমার একটি নিয়মিত দৃশ্য ছিলো। কিন্তু আসলেই কি এটা হয়? তবে কি সাপ গান-বাজনা পছন্দ করে? বীনের সুর শুনে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে?


আজও বেদেরা বীণ বাজিয়ে গ্রামে গ্রামে সাপ খেলা দেখিয়ে বেড়ায়; সাপুড়েরা হাটে-বাজারে সাপের খেলা দেখিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে তাবিজ-কবচ বিক্রির পাঁয়তারা করে।


মজার ব্যাপার হচ্ছে, সাপের কান নেই, চেরা জিহ্বা দিয়ে তারা শব্দ শোনে। এ কারণেই সাপকে শব্দ শোনার জন্য ঘন ঘন জিভ বের করতে হয়। সাপের জিভের সেই শ্রবণ শক্তিও এত দুর্বল যে, বীণের শব্দে উতলা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।


বীণ বাজিয়ে সাপ খেলা দেখানোর সময় সাপুড়ে এক ধরনের কৌশলের আশ্রয় নেয়। খেয়াল করলে দেখা যায়, সাপুড়ে যখন হাত ঘুরিয়ে বীণ বাজায় তখণ বীণের তালে তালে সাপুড়ে তার নিজের শরীরটাকেও দোলায়। সাপ প্রায় নির্বোধ ধরণের প্রাণী; তাদের দৃষ্টি শক্তিও তেমন প্রখর নয়।


তাই বীণের তালে ঘুরতে থাকা সাপুড়ের হাত ও দুলতে থাকা শরীর সাপের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। সাপ বুঝে উঠতে পারে না, তখন তার আসলে কী করা উচিত। তাই একটু ভালো করে বোঝার জন্য, একটু ভালো করে দেখার জন্য সাপও সাপুড়ের সাথে সাথে দুলতে শুরু করে। আমরা সেই দুলনিকেই সাপের নাচ বা খেলা বলে ভুল করি।


কোনো সাপুড়ে বীণ বাজিয়ে গর্ত থেকে সাপকে বাইরে বের করে এনেছে একথা কেবল গল্পেই শোনা যায়। সাপের সিনেমায় অবশ্য দেখাও যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গর্তে পানি না ঢেলে কিংবা খোন্তা-কোদাল দিয়ে গর্ত না ভেঙ্গে সাপকে গর্ত থেকে বের করে আনা অসম্ভব।


তাবিজ-কবচের জোরে নাকি সাপকে বশ করা যায়! তাবিজ-কবচের ব্যাপারটা পুরোপুরি ধাপ্পা। আসলে সাপুড়েরা দীর্ঘ অনুশীলনের দ্বারা সাপকে বশ মানানো ও সাপ ধরার নানা কৌশল আয়ত্ব করে ফেলে।


এই কৌশলকেই তারা তাবিজ-কবচের গুণ বলে প্রচার চালিয়ে সেসব আমাদের কাছে বিক্রির পাঁয়তারা করে। তেমনি কবিরাজেরা মন্ত্র পড়ে সাপের বিষ নামায় এ ব্যাপারটাও সম্পূর্ণ বুজরুকি। কিছু নির্বিষ সাপে কাটা রোগিকে বিষধর সাপে কাটা বলে মন্ত্র-টন্ত্র পাঠ করে নিজের কৃতিত্ব জাহির করার চেষ্টা করে। কিন্তু আসল বিষধর সাপেকাটা কোনো রোগিকে সাপুড়ের কাছে নিলেই কোথায় পালায় তাদের সেই মন্ত্রের শক্তি!


অর্থাৎ সাপ নিয়ে জানা অধিকাংশ তথ্যই হাস্যকর রকমের মিথ্যা। নিজেদের ব্যবসার উদ্দেশ্যেই প্রধানত এ প্রতারণাগুলো করা হয়ে থাকে।