মাহে রমজানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমল

ইসলামিক শিক্ষা June 12, 2016 1,660
মাহে রমজানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমল

রমজান মাস মুমিনের জন্য নেক আমলের বিশেষ মৌসুম। কৃষিক্ষেত্রে যেমন ফসল বোনার জন্য মৌসুমের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রাখা জরুরি, তেমনি আমলের বেলায়ও বিষয়টি কম গুরুত্বের নয়। সময়মতো বীজ বপন করলে যেমন অধিক ফলন লাভ করা যায়, তেমনি বিশেষ বিশেষ সময়ের আমলের সওয়াবও অধিক; বরং সীমাহীন লাভ করা যায়। বিশেষ করে রমজান মাসের আমলের সওয়াব মহান আল্লাহ সীমাহীন প্রদান করবেন বলে হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়। আমলের ক্ষেত্রে সময়ের বিবেচনার সঙ্গে সঙ্গে আমলের বিশেষত্বটাও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। অর্থাৎ বিশেষ সময়ে বিশেষ আমলের মাধ্যমে মুমিনের জীবনে মহান আল্লাহর অধিকতর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে মাহে রমজানে বিশেষ বিশেষ কিছু আমলের বিবরণ হাদিসে পাওয়া যায়। বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) মাহে রমজানে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করতেন।


হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৎকাজে অগ্রগামী ছিলেন। বিশেষ করে রমজান মাসে যখন জিবরাঈল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তাঁর সৎকর্মের গতি অনেক বেড়ে যেত। জিবরাঈল (আ.) তাঁর সঙ্গে রমজান মাসের প্রতিটি রাতে সাক্ষাৎ করতেন। তাঁরা পরস্পরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন (ওই সময় পর্যন্ত পবিত্র কোরআনের অবতীর্ণ অংশ হজরত জিবরাঈল (আ.) একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে শোনাতেন, একইভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)ও হজরত জিবরাঈল (আ.)-কে শোনাতেন। এভাবে তাঁরা রমজানের প্রতিটি রাতে একে অপরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন)। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমলের গতি জিবরাঈল (আ.) সাক্ষাৎ করার পর বৃষ্টি আনয়নকারী বাতাসের চেয়েও দ্রুত হয়ে যেত। (সহিহ আল-বোখারি : ৬, সহিহ মুসলিম : ২৩০৮, মুসনাদে আহমাদ : ২৬১৬, আল আদাবুল মুফরাদ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৫১, আস্-সুনানুল কুবরা : ২৪২৬)


রমজান কোরআন নাজিলের মাস, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাত লাভের মাস। আর মহানবী (সা.)-এর রিসালাতের সনদ ছিল আল-কোরআন। আমাদের জন্য পৃথিবীর সর্বকালীন উম্মতের শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়ার দলিল আল-কোরআন এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান আমাদের আল-কোরআন। তাই কোরআন নাজিলের মাস রমজানের দাবি প্রতিটি মুসলমানের কাছে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা। তা ছাড়া মাহে রমজানে পুণ্যের ভাণ্ডারকে সীমাহীন বাড়িয়ে নিতে কোরআন তিলাওয়াতের চেয়ে সহজ আমল আর কিছুই হতে পারে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করবে, সে একটি নেকি পাবে। আর প্রতিটি নেকি ১০ গুণ করে দেওয়া হবে। আমি এ কথা বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। (সুনানে তিরমিজি : ২৯১০, বায়হাকি শুআবুল ইমান : ৩৭১, তাফসিরে বাসিত, খণ্ড : ১৪ পৃষ্ঠা : ২০৩ , তাফসিরে কুরতুবি : খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা-৭) হাদিসে কোরআনের একটি হরফ পাঠের জন্য ১০ নেকির যে কথা বলা হয়েছে, সেটা রমজান মাসের বিষয়ে নয়। অন্য সময়ে এক হরফ পাঠ করলে যদি ১০ নেকি পাওয়া যায়, তাহলে হাদিসের ভাষ্যমতে মাহে রমজানে এক হরফের বিনিময়ে কমপক্ষে ১০ গুণ সত্তর, অর্থাৎ সাতশ নেকি পাওয়া যাবে।


কোরআন তিলাওয়াতকারীর পিতা-মাতাকেও আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন সম্মানিত করবেন। হজরত সাহল (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি সুবহানাল্লাহিল আজিম বলবে, জান্নাতে তার জন্য একটি গাছ উদগত হবে। আর যে কোরআন তিলাওয়াত করবে এবং খতম করবে আর কোরআনের মধ্যে যা কিছু আছে তার ওপর আমল করবে, কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে নূরের এমন মুকুট পরিয়ে দেওয়া হবে, যার উজ্জ্বলতা পৃথিবীর সূর্যের চেয়েও বেশি। (সুনানে আবু দাউদ : ১৪৫৩, মুসনাদে আহমাদ : ১৫৬৪২, বায়হাকি শুআবুল ইমান : ১৭৯৭, তাফসিরে বাগবি, খণ্ড-১ , পৃষ্ঠা-৬৫ , শারহুস্-সুন্নাহ : ১১৮০) সুতরাং মাহে রমজানে সব মুসলমানের উচিত, বেশি বেশি করে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা।