ঘুরে আসুন ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ থেকে!

দেখা হয় নাই June 9, 2016 1,520
ঘুরে আসুন ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ থেকে!

সামনেই বাঙালির শারদোৎসব দুর্গাপূজার ছুটি। তাই এখন থেকেই কাজকর্ম থেকে অবসর নিতে চাচ্ছেন অনেকে।


এরই মধ্যে ভ্রমণপিপাসু বাঙালির মন পাখনা মেলতে শুরু করে দিয়েছে। শরতের মেঘের ভেলায় ভেসে মন উড়াল দেয়ার জন্য ব্যাকুল করছে। মন হারানোর এই মৌসুমে ছুটির আমেজে মেতে উঠেছে দুই বাংলার মানুষ।


কর্মব্যস্ত জীবনে কয়েক দিনের অখণ্ড অবসরে তাই পর্যটকরা বেরিয়েও পড়েছেন ভ্রমণে। এপার বাংলা থেকে যেমন অনেকে ওপার বাংলায় পাড়ি জমাচ্ছেন, তেমনি ওপার বাংলা থেকেও অনেকে আসছেন এপার বাংলায়।


তবে ছুটির এই মৌসুমে দুই বাংলার পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় পর্যটনস্থল হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ। নবাবি আমলের সংস্কৃতি, ভাস্কর্য আর ঐতিহ্যে ঘেরা মুর্শিদাবাদের মাটিতে এখন পর্যটকের ঢল।


এককথায় বাংলার স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের ইতিহাস মানেই তো মুর্শিদাবাদ। তাই একনজরে সেই ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদের দর্শনীয় স্থানগুলোর এক ঝলক.....


কাটরা মসজিদ:

শহরের পূর্বদিকে এক কিলোমিটার দূরে ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ নির্মাণ করেন মুর্শিদকুলি খাঁ। ১০ ফুট উঁচু ভিতবিশিষ্ট বেদির ওপর ১৭০ বর্গফুটবিশিষ্ট বর্গাকৃতি মুর্শিদাবাদের সর্ববৃহৎ এবং সুপ্রাচীন এই মসজিদ।১৪টি সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয় বেদিতে। সিঁড়ির নিচে একটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে মুর্শিদকুলি খাঁর সমাধি। মসজিদ প্রাঙ্গণ আয়তনে ১৬৬ বাই ১১০ ফুট। সম্পূর্ণ মসজিদটি ছয় বিঘা ১০ কাঠা জমির ওপর অবস্থিত।


জাহানকোষা:

কাটরা মসজিদের পূর্বদিকে অদূরেই গোবরনালার ধারে জাহানকোষা কামানটি রয়েছে। এখানেই মুর্শিদকুলি খাঁর কামান রাখা হতো। জাহানকোষা কামানের ওজন ২১২ মণ। লম্বায় ১২ হাত। প্রস্থে ৩ হাত। ৩০ কিলো বারুদ লাগত এই কামান দাগতে। এই কামানের নির্মাতা ছিলেন বাংলাদেশের ঢাকার বিখ্যাত শিল্পী জনার্দন কর্মকার।


মতিঝিল:

মতিঝিল মুর্শিদাবাদ শহরের অন্যতম আকর্ষণ। নওয়াজেশ খান ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। মতিঝিল প্রাসাদ ও সামাধিগুলো সাত বিঘা ১২ কাঠা জমির ওপর অবস্থিত। প্রাসাদটি ৫০ ফুট লম্বা, ৪০ ফুট চওড়া এবং উচ্চতায় ২৫ ফুট। এর তিনটি প্রকোষ্ঠ ও তিনটি প্রবেশপথ দিয়ে ঝিলের পানি স্পর্শ করা যেত।


ফুটি মসজিদ:

মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি থেকে মাইলখানেক দূরে কুমারপুরে নবাব সরফরাজ খান মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা যথাক্রমে ১৩৫ ফুট ও ৪০ ফুট। আয়তনে এই মসজিদ মুর্শিদাবাদের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। মসজিদের চারকোণে চারটি মিনার রয়েছে।


ফর্হাবাগ ও রোশনীবাগ:

ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে ডাহাপাড়া গ্রামে রোশনীবাগ উদ্যান। এটি নবাব সুজাউদ্দিনের সমাধিস্থল। সমাধি ভবনটির দৈর্ঘ্য ১২ হাত, প্রস্থ ৩ হাত। এত বড় সমাধি মুর্শিদাবাদে আর নেই। রোশনীবাগে নবাবরা আলোক উৎসব করতেন। রোশনীবাগের কিছুটা উত্তরে ফর্হাবাগ বা সুখকানন। ফর্হাবাগ ও রোশনীবাগের স্থাপত্য নির্মাণ করেন সৌন্দর্যের পূজারি নবাব সুজাউদ্দিন।


হিরাঝিল:

ফর্হাবাগ থেকে মাইলখানেক দূরে জাফরাগঞ্জে হিরাঝিল প্রাসাদ নির্মাণ করেন নবাব সিরাজউদদৌলা। প্রাসাদের পাশে তিনি একটি ঝিল তৈরি করেন। এই ঝিলের নাম হিরাঝিল। এখানেই তিনি লুতফন্নেসার সঙ্গে বাস করতেন।


ইমামবাড়া মদিনা:

এই বিখ্যাত স্থাপত্যশিল্পের নির্মাতা নবাব সিরাজউদদৌলা। ইমামবাড়ার মাঝখানে মদিনা। কথিত আছে, ছয় ফুট গর্ত করে মদিনায় মক্কার মাটি এনে তা ভরাট করা হয়েছিল। এটি একটি গম্বুজাকৃতি মসজিদ। মসজিদের চারপাশে বারান্দা আছে।


খোশবাগ:

ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে একটি উদ্যান। নবাব আলিবর্দি তার জননীর সামাধির জন্য এই উদ্যান নির্মাণ করেন। এখানেই আলিবর্দি খাঁ, সিরাজদদৌলা, লুতফন্নেসার সমাধি আছে।


জাফরগঞ্জ:

ভাগীরথীর তীরে জাফরগঞ্জ প্রাসাদটি অবস্থিত। জাফরগঞ্জই সিরাজের বধ্যভূমি। এখানেই মীরজাফর, মীরন, মুন্নি বেগমদের সমাধি আছে।


হাজারদুয়ারি:

ইতালীয় স্থাপত্যের আদলে নির্মিত হাজারদুয়ারি। এটি নির্মাণ করেন নবাব নাজিব হুমায়ুন। ১৮২৯ সালে এই হাজারদুয়ারির নির্মাণকাজ শুরু হয়। আর শেষ হয় ১৮৩৭ সালে। ৫১৮ একর জমির ওপর হাজারদুয়ারি নির্মিত।


প্রাসাদটির উচ্চতা ৮০ বর্গফুট। এর পূর্বদিকে বেগমমহল, কিল্লার। মধ্যস্থলে হাজারদুয়ারি। প্রবেশদ্বারে ৩৬টি সিঁড়ি আছে। মধ্যে রয়েছে গোলাকৃতি একটি দরবার হল। নবাবদের সিংহাসন, নবাবদের অস্ত্র, ১৭ জন নবাবের তৈলচিত্র এখানে সংরক্ষিত আছে।


এ ছাড়া মুর্শিদাবাদের বুকে রয়েছে নবাবি আমলের নির্মিত বেশ কয়েকটি মন্দির স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য। যার মধ্যে অন্যতম বড়নগরের রানী ভবানী নির্মিত চারবাংলা জোড়াবাংলা মন্দিরের নিদর্শন অভূতপূর্ব। এখানে ভবানীশ্বর ও রামনাথেশ্বর মন্দির দুটি স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখযোগ্য। যা ৩০০ বছর পর আজো নবাবি আমলের ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়।


ভট্টমাটির রত্নেশ্বর শিবমন্দির, মুর্শিদবাদের ১৭ চূড়াবিশিষ্ট লালাজির মন্দির, দয়াময়ী কালীমন্দির, দয়ানগরের নবরত্ন মন্দির, সৈয়াদাবাদের আরমেনিয়াদের সমাধিক্ষেত্র, কালিকাপুরের কুঠি এবং গির্জা রয়েছে এখানে। এইসব কারণেই মুর্শিদাবাদ দর্শণার্থীদের পছন্দের অন্যতম কান্ডারী।