জানেন কি আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

ইসলামিক শিক্ষা June 4, 2016 1,803
জানেন কি আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর এই আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের দশম আত্মহত্যা প্রবণ দেশ।


বাংলাদেশ পুলিশ এবং অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮টি তাজা প্রাণ আত্মহত্যার কারণে ঝরে যাচ্ছে।


মনোবিজ্ঞানীদের মতে, হতাশা থেকে যখন কেউ উপলব্ধি করে যে, তার জীবনের কোনো মূল্য নেই, তখন সে আত্মহত্যা করে। আর আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতেও আত্মহত্যাকারীদের নব্বই শতাংশই কোনো-না-কোনো ভাবে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। আত্মহত্যার কারণ যাই হোক না কেনো এটা কোনো সমাধান নয়।


ইসলামেও আত্মহত্যা হারাম। ইসলামে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে সূরা নিসার ২৯ থেকে ৩০ নম্বর আয়াতে ঘোষণা দেন- ‘তোমরা নিজেকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর দয়ালু। আর যে বাড়াবাড়ি ও জুলুমের মাধ্যমে এ কাজ করবে, তাকে আমি আগুনে পোড়াব। আর এ কাজ করা আল্লাহর পক্ষে সহজতর।’


উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা আত্মহত্মাকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি ঘৃণ্য এ কাজের পরিণামেরও চূড়ান্ত দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।


আত্মহত্মা কেবল সকল নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে একমাত্র সমাধান হতে পারে না। কারণ মানব জীবন অতি মূল্যবান।


আর যারা এ পথকে অনুসরণ করে তাদের পরিনতিও ভয়াবহ। এ জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) উম্মাতকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন- হযরত জুনদুব ইবন আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেললো। তারপর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করলো। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারী)


এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন- ‘যে ফাঁসি লাগিয়ে বা গলা টিপে আত্মহত্যা করে, জাহান্নামে সে নিজেই নিজেকে অনুরূপভাবে শাস্তি দিবে। আর যে ব্যক্তি বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে জাহান্নামেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি ভোগ করে।’ (বুখারী)


আত্মহত্যা সম্পর্কে রাসূল (সা.) আরো বলেন- ‘যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজ হাতে বিষপান করতে থাকবে।’


অন্য হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ধারালো: অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে তাকে সে অস্ত্র দিয়েই দোযখের মধ্যে শাস্তি দেয়া হবে।’ (বুখারী)


বিশেষজ্ঞরা বলেছেন- আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি মানসিক সহায়তা ও চিকিৎসা সেবা দরকার।


এ ক্ষেত্রে মসজিদের ইমাম সাহেব তার সাপ্তাহিক খুতবায় বা ভাষণে, শিক্ষক তার ক্লাসে পাঠদানে এবং ইসলামি গবেষকগণ তাদের লেখনিতে কিংবা সংবাদ মাধ্যমে আলোচনায় ইসলামে আত্মহত্যার কুফল এবং এ কাজে লিপ্ত ব্যক্তির কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করে আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেন।